ইউএনও রুমানার স্বেচ্ছাচারিতায় নাকাল সেবাগ্রহিতারা!

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:


স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হয়রানি করা নিত্যদিনের অফিসিয়াল কার্যক্রমে পরিণত করেছেন নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার সাবেক ও বর্তমান বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রুমানা আফরোজ।

সম্প্রতি আদমদীঘি উপজেলা ও সান্তাহার পৌরসভার ঠিকাদার সমাজের সাতজন সদস্যের একটি লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে বেরিয়ে আসছে ইউএনও’র নানা অপকর্মের কাহিনী।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে নিজেই ঠিকাদার সেজে কাজ করা এবং ঘুষ না দেওয়ায় ঠিকাদারদের বিল প্রদান না করে মাসের পর মাস হয়রানি করার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাতজন ঠিকাদার স্বাক্ষরিত এক অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরেও অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিনিয়তই সেবা গ্রহিতারা রুমানা আফরোজার কাছে সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ইউএনও’র গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একচ্ছত্রভাবে সরকারি বরাদ্দের সিংহভাগ প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ হরিলুট করা হচ্ছে। কেউবা সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরছেন, আবার কাউকে শতকরা ৫% হারে উৎকোচ দিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে।

ইউএনও’র এমনই নানা অপকর্মে নাকাল হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন মহলের সেবা গ্রহিতারা। বিভিন্ন সময় ইউএনও’র অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে উপজেলার ভুক্তভোগীরা। এমন নানা তথ্য জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ভুক্তভোগীরা।

সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছর সময়ে রুমানা আফরোজ যখন নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন তখন উপজেলার গৃহহীন আদিবাসীদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে সমালোচিত হন।

দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তৎকালীন সরকারের গঠন করা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটি তদন্ত দল ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা খুঁজে পান। পরে তাকে বগুড়ার আদমদীঘিতে বদলি করা হয়। তার বদলির খবর ছড়িয়ে পড়লে পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন মহলের মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন।

এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে কাজ না করে ভুয়া কাগজপত্রাদির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। রুমানার স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো পত্নীতলা উপজেলাবাসী। ক্ষমতার অহংকারে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হয়রানি করার অভ্যাস যেন রুমানা আফরোজার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে এমনটিই মনে করছেন দুই উপজেলার সচেতন মহল।

সম্প্রতি আদমদীঘি উপজেলা ও সান্তাহার পৌর সভার ঠিকাদার সমাজের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ইউএনও রুমানা আফরোজার গড়ে তোলা ত্রাসের রাজত্বের কাহিনী বেরিয়ে আসছে।

অভিযোগকারী সদস্যদের একজন মেসার্স হুজাইফা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাহজাহান আকন্দ জানান রুমানা আফরোজ ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে এই উপজেলায় যোগদান করার পর থেকে সাধারণ মানুষদের সাথে প্রভু সুলভ আচরণ করে আসলেও উপজেলা পরিষদের বিশেষ বরাদ্দের প্রায় দুই কোটি টাকার গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে নিজে ঠিকাদার সেজে বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ সরকারি অর্থ আত্মসাত করেছেন।

গত ৫ আগস্টের পর সরকারি সিদ্ধান্তে তিনি উপজেলার প্রথম শ্রেণির সান্তাহার পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে তার অনুপস্থিতির কারণে পৌরসভার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

পাশাপাশি পৌরসভার উন্নয়ন কার্যক্রমের ঠিকাদারবৃন্দ সময় মত কাজ সমাপ্ত করার পর বিল প্রদানের আবেদন করেন। কিন্তু প্রাপ্ত বিলের টাকার শতকরা পাঁচ ভাগ উৎকোচ না দেওয়ার কারণে প্রায় চার মাস অতিবাহিত হলেও বিল অনুমোদন স্বাক্ষর করছেন না।

তিনি পৌরসভার প্রশাসক নিযুক্ত হবার পর মাসে দুই/চারবার মেয়রের কক্ষে অফিস করেন। ওই কক্ষে থাকা ভালোমানের আসবাবপত্র থাকলেও সেগুলো পছন্দ না হওয়ার অজুহাতে বাতিল করেন এবং টেন্ডার ছাড়াই নিজে ঠিকাদার সেজে রাজস্ব তহবিলের ছয় লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে নামমাত্র আসবাবপত্র ক্রয় করেছেন।

সম্প্রতি পৌরসভায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও বগুড়া প্রশাসকের আগমন ও পরিদর্শন উপলক্ষে পৌরসভার তহবিল থেকে আপ্যায়ন করা হলেও পরে ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় পৌনে এক লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন।

অথচ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এমতাবস্থায় পৌরসভার তহবিল খালি হবার আশংকায় শংকিত হয়ে পড়েছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সান্তাহার পৌরসভার প্রশাসক রুমানা আফরোজ মুঠোফোনে (০১৭৩৩৩৩৫৪৩৭) জানান, ঠিকাদারদের আনা এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি বা সত্যতা নেই। অভিযোগকারীরা অভিযোগপত্রের রিসিভ কপিও দেখাতে পারবেন না। এছাড়া পৌরসভার বিষয়গুলো নিয়ে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন।

 

Exit mobile version