মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
ভলোদিমির জেলেনস্কি
সোনার দেশ ডেস্ক:
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছেন, তার দেশের সম্পৃক্ততা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া প্রস্তাবিত কোনো শান্তি চুক্তিতে কিইভ রাজি হবে না।
ডনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে আলোচনা শুরুর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে জেলেনস্কি এই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
তার ভাষায়, “স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।”
পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপচারিতার পর যুদ্ধ শেষ হওয়ার ‘ভালো সম্ভাবনার’ কথা বলেছেন ট্রাম্প। তার কথায়, ইউক্রেইনের নেটোতে যোগ দেওয়া ‘বাস্তবসম্মত’ নয় এবং কিইভের আগ্রাসন-পূর্ব সীমান্তে ফিরে যাওয়ার ‘সম্ভাবনা কম’।
ট্রাম্প এখন ইঙ্গিত দিয়েছেন, একটি নিরাপত্তা সম্মেলনের আয়োজন করছে মিউনিখ, সেখানে রাশিয়ার প্রতিনিধিরা শুক্রবার আমেরিকানদের সঙ্গে দেখা করবেন।
ট্রাম্প বলেন, “রাশিয়া আমাদের জনগণের সঙ্গে থাকবে। প্রাসঙ্গিকভাবে ইউক্রেইনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাশিয়া, ইউক্রেইন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা উচ্চ পর্যায়ের লোকজন ছাড়া আর কোনো দেশ থেকে কারা সেখানে যাবেন তা নিশ্চিত নয়।”
তিনি বলেন, “আমি তাদের (রাশিয়ানদের) ফিরে পেতে চাই। আমি মনে করি তাদের বের করে দেওয়া ভুল ছিল। দেখুন, রাশিয়াকে পছন্দ করা বা রাশিয়াকে পছন্দ না করার প্রশ্ন নয়।”
মিউনিউখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ না নেওয়া রাশিয়া তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
জেলেনস্কির উপদেষ্টা দিমিত্রো লিটভিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মিউনিখে রুশদের সঙ্গে আলোচনা’ প্রত্যাশিত নয়।
ট্রাম্পের সঙ্গে বুধবার একান্ত ফোনালাপে ইউক্রেইনের নেতা জেলেনস্কি বলেন, তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোনো চুক্তি মানা হবে না।
“ইউরোপীয়দেরও আলোচনার টেবিলে থাকা দরকার ছিল।”
তিনি ট্রাম্পকে বলেন, তার অগ্রাধিকার হল ‘সুরক্ষা গ্যারান্টি’, যা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া দেখতে পেতেন না।
বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে অন্যখানে তিনি বলেছেন, ইউক্রেইনের জন্য নেটো সদস্যপদ তার অংশীদারদের জন্য ‘সবচেয়ে ব্যয়বহুল’ বিকল্প হবে।
“যুদ্ধ শেষের জন্য পুতিনের প্রস্তুতির দাবির ওপর আস্থা না রাখতেও আমি বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছি।”
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেছেন, কিইভকে ছাড়া ইউক্রেইন নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না এবং যেকোনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে ইউক্রেইনের কণ্ঠস্বর।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ‘আদিষ্ট শান্তি’ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এটি ‘দুঃখজনক’ যে ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে ক্রেমলিনকে ‘ছাড়’ দিচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি ‘তুষ্টিকরণের’ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই টেবিল থেকে কিছু সরিয়ে নেওয়া আমাদের উচিত হবে না, কারণ এটি রাশিয়ার কোর্টে যাবে এবং তারা সেটিই চায়।”
২০২২ সালে ইউক্রেইনে পূর্ণমাত্রার রুশ আগ্রাসনের পর পুতিনের সঙ্গে প্রথম প্রকাশ্যে হোয়াইট হাউসের তরফে কথা বলা ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি সৌদি আরবে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
ওভাল অফিসে বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পুতিন চান যুদ্ধের অবসান হোক এবং তিনি শিগগিরই যুদ্ধবিরতি আশা করছেন।
শান্তি প্রক্রিয়ায় ইউক্রেইন সমান সদস্য কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তাদের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বৃহস্পতিবার নেটোর এক সম্মেলনে বলেন, পুতিন ও জেলেনস্কি উভয়ের সঙ্গেই শান্তি আলোচনা হবে। তিনি ট্রাম্পকে ‘যুৎসই চুক্তিকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
হেগসেথ এর আগে বুধবার বলেছিলেন, ইউক্রেইনের ২০১৪ সালের পূর্ববর্তী সীমান্তে ফিরে আসার প্রত্যাশা এবং নেটোতে যোগদানের সম্ভাবনা ‘অবাস্তব’। ওই অবস্থান থেকে সরে এসে পরদিন তিনি বলেছেন, সবকিছু আলোচনার টেবিলে রয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেইনকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ইউরোপে মার্কিন সেনার সংখ্যাও আলোচনার টেবিলে থাকতে পারে।
২০১৪ সালে ইউক্রেইনের রুশপন্থি প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর মস্কো কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখল করে নেয় এবং পূর্ব ইউক্রেইনে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দেয়।
বছর তিনেক আগে এই সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেয়।
বিবিসি লিখেছে, রাজধানী কিইভের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মস্কোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে রুশ বাহিনী পূর্ব ও দক্ষিণে ইউক্রেইনের প্রায় এক পঞ্চমাংশ অঞ্চল দখল করেছে এবং দেশজুড়ে বিমান হামলা চালিয়েছে।
তার পাল্টায় ইউক্রেইন কামান ও ড্রোন হামলার পাশাপাশি রাশিয়ার পশ্চিমে কুরস্ক অঞ্চলে স্থল অভিযানে চালিয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ