শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সাঁথিয়া প্রতিনিধি
পাবনার সাঁথিয়ার শুঁটকি মাছ যাচ্ছে ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২০টি দেশে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। শুঁটকি মাছ রফতানি করে অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক অর্থ। এছাড়া অনেকইে এ থেকে করছেন জীবিকা নির্বাহ।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিল ও নদীর পানি কমতে শুরু করায় উপজেলার ঘুঘুদহের বিল, সোনাই বিল, বড় বিল, ছোট বিল, মুক্তাহারের বিল এলাকায় চলছে মাছ শুঁটকি করার কাজ। বিল এলাকার গ্রামের মধ্যে ঢুকলেই চোখে পড়ে শুঁটকির চাতাল। এর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে গন্ধেই বুঝা যায় আসেপাশে আছে শুঁটকি মাছের চাতাল। এলাকার বিভিন্ন সড়কে ও পতিত জমিতে দেখা যায় শুঁটকির চাতাল। সাঁথিয়ার ঘুঘুদহের বিল, সোনাই বিল, বড় বিল, ছোট বিল, মুক্তাহারের বিল ছাড়াও চাটমোহরের চলনবিল ও সুজানগরের গাজনার বিল থেকে আমদানি করা হয় মাছ। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে পুঁটি মাছ, বাইম মাছ, চাঁদা মাছ ও টাকি মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশিয় মাছ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এসব চাতালে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ১২০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন শুঁটকি মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাতাল থেকে পছন্দের শুঁটকি মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। শুঁটকি মাছের মান ভেদে ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। ‘এ’ গ্রেডের (ভালো মানের ) শুঁটকি মাছ মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া ইন্দোনেশিয়াসহ প্রায় ২০টি দেশে রফতানি করা হচ্ছে। সাধারণত এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে রয়েছে মিঠা পানির শুঁটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা। সাঁথিয়ার সাতানির চর, আরাজি গোপিনাথপুর, হুইখালী, কলাগাছি ও রঘুনাথপুরসহ প্রত্যন্ত বিল এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার শুঁটকি তৈরীর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। শুঁটকি তৈরীর কাজে নিয়োজিত নাজমা, আবেদা, জুলি, ফাতেমা, হাবলুসহ বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ জানান, তিন কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে এক কেজি শুঁটকি তৈরী হয়। শ্রেণিভেদে শুঁটকির বাজার মূল্য ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে বিল এলাকা থেকে সংগ্রহকৃত মাছ থেকে ১২০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা হবে বলে শুঁটকি ব্যাবসায়ীরা জানান।
আরাজি গোপিনাথপুর ও সাতানির চরের শুঁটকি ব্যবসায়ী হান্নান, রইজ ও মনজু বলেন, ‘আমাদের চাতাল থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় চার মেট্রিক টন শুঁটকি মাছ আড়তে পাঠাই। এখানকার পুঁটি শুঁটকির ভারতে সবচেয়ে বেশি কদর রয়েছে। আর অন্যান্য মাছ স্থানীয় বাজারে চলে। তবে সবচেয়ে বেশি চলে চিটাগাং ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করেন।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমারা সরকারিভাবে শুঁটকি মাছ উৎপাদনের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি প্রণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ে। শুঁটকি মাছের তদারকি এবং সরকারি প্রশিক্ষণসহ সবধরনের সহযোগিতা ও নজরদারির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।