মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
ড. মাওলানা ইমতিয়াজ আহমদ:
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে আসে পবিত্র ইদুল ফিতর। ইদ মানে আনন্দ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির ইদ-উৎসব আছে। আর এটা (ইদুল ফিতর) হচ্ছে আমাদের ইদ-উৎসব।’ হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তাদের (রোজাদার বান্দাদের) ইদের দিন হয় অর্থাৎ ইদুল ফিতরের দিন, তখন আল্লাহ তায়ালা রোজাদার বান্দাদের সম্পর্কে ফেরেশতাগণের সাথে গর্ব করে জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! বলো দেখি, আমার কর্তব্যপরায়ণ প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হবে? ফেরেশতাগণ বলেন, হে প্রভু! পূর্ণরূপে তার পারিশ্রমিক দান করাই তো তার প্রতিদান। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা-বান্দিরা তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছে, অতঃপর আমার কাছে দোয়া করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে (ইদগাহে) গমন করেছে। আমার সম্মান, মর্যাদা, দয়া, বড়ত্ব ও মহত্বের কসম, জেনে রাখো- আমি তাদের দোয়া কবুল করব। অতঃপর বলেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমার এখন ফিরে যাও, আমি তোমাদের পাপসমূহকে নেকীর দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
ইদের মূল আনন্দ হচ্ছে এই গুনাহ মাফের আনন্দ। ইদের দিনে বেশ কিছু আমল আছে। যেমন- ১. শরীয়তের সীমার ভিতর থেকে সাধ্যানুযায়ী সজ্জিত হওয়া, ২. মেসওয়াক করা, ৩. গোসল করা, ৪. সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম (অথবা ধৌত করা) পোশাক পরিধান করা, ৫. খুশবু (আতর) ব্যবহার করা, ৬. অতি প্রত্যুষে ঘুম থেকে ওঠা, ৭. ফজরের নামাজের পর অতি শীঘ্রই ইদগাহে উপস্থিত হওয়া, ৮. ইদুল ফিতরের দিনে ইদগাহে যাওয়ার পূর্বে খেজুর অথবা অন্য কোনো মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া, ৯. ইদুল ফিতরে ইদগাহে যাওয়ার পূর্বেই সদকায়ে ফিতর আদায় করে দেওয়া, ১০. কোনো ওজর অসুবিধা না থাকলে ইদের নামাজ মসজিদে না পড়ে ইদগাহে অর্থাৎ খোলা ময়দানে পড়া, ১১. ঈদগাহে এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথে ফিরে আসা, ১২. ইদগাহে হেঁটে যাওয়া, ১৩. ইদগাহের পথে ইদুল ফিতরে অনুচ্চস্বরে এই তাকবীর পড়তে পড়তে যাওয়া- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
ইদগাহে যাওয়ার পূর্বেই সদকায়ে ফিতর আদায় করতে বলা হয়েছে। অবশ্য রমজানে সওয়াব বেশি হওয়ার কারণে সাধারণত রমজানেই এটা আদায়া করে দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত কিছু মাসয়ালা আলোচনা করছি।
ইদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় যার নিকট সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার সমপরিমাণ মূল্যের অর্থ থাকে তার ওপর সদকায়ে ফিতর বা ফিতরা ওয়াজিব। * রোজা না রাখলে বা রাখতে না পারলে তার ওপরও ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। এ কথা নয় যে, রোজা না রাখলে ফিতরাও দিতে হয় না। * সদকায়ে ফিতর বা ফিতরা নিজের পক্ষ থেকে এবং নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে দেওয়া ওয়াজিব। সুতরাং ইদের দিন সকালে কোনো সন্তানের জন্ম হলে তার পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। * সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব না হলেও সঙ্গতি থাকলে দেওয়া মুস্তাহাব এবং অনেক সওয়াবের কাজ। * যাকে জাকাত দেওয়া যায় তাকে ফিতরা দেওয়া যায়।
ইদের দিন রোজা রাখা হারাম। তবে শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখার কথা হাদীসে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে যে ব্যক্তি রমজান মাসে ফরজ রোজা আদায় করল এবং তার সাথে শওয়ালের ছয়টি রোজা আদায় করল সে যেন সারা বছর রোজা আদায় করল। তাই এ রোজার প্রতি বিশেষ যতœবান হওয়া উচিত।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে আসন্ন ইদ যেন সবার জন্য আনন্দময় হয় আল্লাহ তায়ালার দরবারে সেই কামনা করছি।
লেখক: পেশ ইমাম, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট জামে মসজিদ, রাজশাহী