ইদ বাজার : যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী

আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২৫, ১০:২২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী নগরীর গণকপাড়া এলাকা। সোমবার দুপুর ১টা। এখানে যানবাহনের জটের দীর্ঘ লাইনের মধ্যে একটি অটোরিকশায় বসে আছেন মধ্যবয়স্ক এক নারী, সঙ্গে রয়েছে ছোট্ট বাচ্চা। কাছে গিয়ে আলাপে জানা গেল, তাঁরা মা-ছেলে। বিউটি খাতুন নামের ওই নারী বললেন, তিনি পার্শ্ববর্তী পবা উপজেলা থেকে ইদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। পাঁচ মিনিট আগে তাঁরা এখানে যানজটে আটকা পড়েছেন। নগরীর শালবাগান এলাকা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্বের গণকপাড়া এলাকায় আসতে তাঁদের তিনটি স্থানে যানজটে পড়তে হয়েছে।

তাঁরা সাহেব বাজারের আরডিএ মার্কেটে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন। বিউটি খাতুনের মতো রাজশাহী নগরীর অনেকেই এখন বাসা থেকে বেরিয়ে যানজটের মুখোমুখি হচ্ছেন। নগরের বিভিন্ন মোড়ে যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ। রমজান মাস ঘিরে কয়েক দিন ধরে নগরে মানুষের চলাচল বেড়েছে। ইদুল ফিতর সামনে রেখে কেনাকাটার জন্য বিপণিবিতানগুলোয় ভিড় বাড়ছে। বিভাগীয় শহর হওয়ায় পাশের জেলা ও উপজেলা থেকেও মানুষজন ইদের কেনাকাটা করতে আসছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অন্য সময়ের তুলনায় যানজট বেড়েছে। তবে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা চান যানজট নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তারা মনে করেন, অস্থায়ী দোকানগুলোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ করা, অবৈধ পার্কিং নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও যানবাহনের বিকল্প রুট চালু করা হলে যানজট কমে আসবে।

সোমবার (১৫ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- ইদুল ফিতর উপলক্ষে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে নগরীর অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা- রেলগেট, কোর্ট স্টেশন, নিউ মার্কেট, সাহেব বাজার, রাণীবাজার, গণকপাড়া, রেশমপট্টি ও আরডিএ মার্কেট এলাকায়। ইদকে কেন্দ্র করে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানগুলো যান চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তবে এ বছর বাজার করতে এসে ভোগান্তির মাত্রা যেন কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। যানজটের কারণে বাজারের প্রধান সড়ক ও আশপাশের এলাকা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে ইদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষদের দুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছেছে। দিনে যানজট কিছুটা কম হলেও সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বয়স্ক, নারী ও শিশুদের জন্য এই ভোগান্তি আরও বেশি।

দাদু ও ছোট্ট ভাইকে সাথে নিয়ে আরডিএ মার্কেটে ইদের কেনাকাটা করতে এসেছেন আনিকা তাবাসসুম। তিনি জানান, আমি সকালে কেনাকাটা করতে এসেছিলাম কিন্তু মাত্র কয়েকটা দোকান ঘুরতেই দুপুর হয়ে গেছে। প্রচ- ভিড়, গরম আর যানজটের মধ্যে হাঁটতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও ছোট ভাইকে নিয়ে কেনাকাটা করছি।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার কয়েকজন বান্ধবীর সাথে আরডিএ মার্কেটে ইদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। তিনি জানান, আমরা কয়েকজন বান্ধবী মিলে ইদের কেনাকাটা করতে এসেছি। কিন্তু এই যানজট ও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে খুব সমস্যা হচ্ছে। রাস্তার পাশে দাঁড়ালেও ধুলো-বালি আর যানবাহনের শব্দে দম বন্ধ হয়ে আসছে।

সাহেব বাজার কাপড়পট্টির ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, বছরের সিংহভাগ ব্যবসায় হয় ইদের সময়। কিন্তু যানজটের কারণে ক্রেতারা আমাদের দোকানে আসতে পারছেন না। এর ফলে ব্যবসার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ইদে আমাদের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে, কিন্তু যানজটের কারণে ক্রেতারা ঠিকমতো বাজারে ঢুকতে পারছেন না। অনেকেই বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এটা আমাদের বিক্রিতেও প্রভাব ফেলছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. নূর আলম সিদ্দিকী সোনার দেশকে বলেন, বিভাগীয় শহর হওয়ায় প্রতি বছর ইদের আমেজ বৃদ্ধির সাথে সাথে যানজটের সমস্যা দেখা দেয়। এবার ইদের আগে মানুষ কেনাকাটা করতে বেরোনোয় যানজট কিছুটা বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আরএমপি পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে আমরা যানজট নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন বিপণি বিতান কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিয়ে বিপণি বিতানের সামনে যত্রতত্র যানবাহনের ভিড় এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরএমপি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইদের আগে মানুষের চলাচল বেড়েছে ঠিকই, তবে রাজশাহীর বেশির ভাগ বিপণি বিতানে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা, ফুটপাত বেদখল এবং খোঁড়াখুঁড়ি করে রাস্তা ফেলে রাখার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ সময়টাতে রাস্তায় যানবাহন যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে যেন যাত্রী ওঠানামা করতে না পারে, তা কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ