শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
জীবন্ত সত্তা পদ্মা নদীসহ দেশের সকল নদ-নদীর সুরক্ষায় দেশের সকল (শাখা ও উপ নদ-নদীসহ) নদ-নদীগুলোকে দখল-দূষণমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নদ-নদীগুলোর গতিপথ অপরিবর্তিত রেখে যথাযথভাবে ‘ক্যাপিট্যাল ড্রেজিং’ করে দেশের অভ্যান্তরীন ও আন্তর্জাতিক ‘নৌ পথ’ চালুর দাবি সহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন তরুণরা। ‘তারুণ্যের জয় হবে নিশ্চয়ই’ এ প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা বরেন্দ্র অঞ্চলের উন্নয়ন গবেষণাধর্মী স্বেচ্ছাসেবী ও যুব সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুুপুর ১২টায় রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরকে প্রদান করা হয়। সংগঠনটির ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে যুব সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সভাপতি মো. শামীউল আলীম শাওন ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক যৌথ স্বাক্ষরিত ১০ দফা দাবি সম্বলিত স্বারকলিপি তার হাতে তুলে দেন। সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয়ের সাধারণ সম্পাদক মো. রবিন শেখ, যুব সংগঠনটির সদস্য ফয়সাল আহাম্মেদ রকি।
স্মারকলিপির অনুলিপি রাজশাহীর জেলা প্রশাসককেও প্রদান করেন তারা। একই দাবি সম্বলিত পৃথক স্বারকলিপি জিইপি রেজিস্ট্রি ডাক যোগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়’র উপদেষ্টা সৈয়দা রেজয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার সদয় অবগতির জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্বারকলিপিতে বলা হয় যে, বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা মোকাবিলা করতে নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, জলাশয়-জলাধার-জলাভূমি দখল-দূষণ ও ভরাট বন্ধ এবং খনন ও পূণরুদ্ধার এবং সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। নদী উন্নয়নে রয়েছে সব উন্নয়নের মূলে। বিশেষকরে টেকসই ও অভিঘাতসহনশীল বৈচিত্র্যপূর্ণ, বৈষম্যহীন নগর ও পরিবেশ উন্নয়নের চাবি কাঠি। সে জন্য নদ-নদী ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণই সার্বিক উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বরেন্দ্র অঞ্চলের নদীগুলোকে হত্যা করা হয়েছে যখন পদ্মাকে তার পানির ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের নদী বাঁচলে বাঁচবে এই জনপদ। বাঁচবে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সহ সুরক্ষা হবে এই অঞ্চলের বাস্তুসংস্থান।
রাজশাহী শহরের বিভিন্ন দূষিত কঠিন, তরল, বিষাক্ত প্লাস্টিক ও মেডিকেল বর্জ্য পদ্মা, শিব-বারনই নদীসহ আশেপাশের জলাধারগুলোতে পড়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এখানকার জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্র। নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি। অন্যদিকে নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, জলাশয়-জলাধার গুলোয় পানি না থাকার কারনে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষসহ আদিবাসীরা পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নদ-নদী, জলাধারগুলোসহ পানির উৎসগুলো নষ্ট করে এখন পানি বিক্রির প্রকল্প তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। পানির জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের সমাজগুলোতে দিনে দিনে সহিংসতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের জীবন জীবিকা সংকটে পড়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে যে, পদ্মানদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা জনপ্রিয় একটি স্থান ‘সীমলা পার্ক’। যা পূর্বে ঐতিহাসিক বাবলা বন হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই স্থানে প্রচুর পাখির বসবাস। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র কর্র্তৃক ‘বন্যপ্রাণী ও পাখির প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও অঙ্গীকার’ শীর্ষক প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রচারাভিযানকালে সকল পাখি ও প্রাণীর সুরক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সেখানে ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২’ সম্বলিত সচেতনামূলক প্রচারণা বোর্ড স্থাপন করা হয়। স্থানটিকে পাখি ও প্রাণীদের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে চেষ্টা করা হয়। এমন একটি প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ স্থানটি আজ দখল হয়ে গেছে।
সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংশ করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে কংক্রিটের অবকাঠামো। সেখানে থাকা সবুজ বৃক্ষ যেখানে পাখিদের বাসস্থান ছিল সেগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে। পুরো এলাকাকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু সিমলা পার্ক এলাকাই নয় এভাবে রাজশাহীর দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলা জীবন্ত সত্তা পদ্মার সমগ্র পাড়ে দখলদারিত্ব বেড়েই চলেছে। এই দখলদারিত্বে পিছিয়ে নেই কেউ-ই, খোদ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পদ্মাপাড়ের একটি বিশাল স্থানে গড়ে তুলেছে বাণিজিক প্রতিষ্ঠান সীমান্ত নোঙর আর সীমান্তে অবকাশ। পদ্মার পাড়ে তারা কংক্রিট দিয়ে গড়ে তুলেছে স্থায়ী স্থাপনা বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নদী দূষণের বিষয়টি তুলে ধরে স্বারকলিপিতে বলা হয় যে, যথাযথ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ঝড়ষরফ ধিংঃব গধহধমবসবহঃ) না করেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ময়লা-আর্বজনা, দূষিত পানি এমনকি মেডিকেল বর্জ্য সরাসরি পদ্মা নদীতে ফেলা হচ্ছে। যার ফলে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১’ ‘বিপদজনক বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙ্গার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১১’, ‘চিকিৎসা-বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮’ সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। এতে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পানির গুনাগুন নষ্ট হচ্ছে। নদী দূষিত হচ্ছে। যার ফলে পদ্মা নদীর পানি প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাচ্ছে। পদ্মা নদীজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে একবার ব্যবহার্য্য (সিঙ্গেল ইউজ) প্লাস্টিক, পলিথিন (কাপ, গ্লাস, প্লেট, চামচ, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি)। যা পদ্মা নদীকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলছে।