রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলন সফল বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ইরানের ধর্মীয় সরকার আপাত পিছু হটেছে। অর্থাৎ ‘নৈতিকতা পুলিশের’ কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ইরান। দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজরি রোববার এই ঘোষণা দিয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে ২২ বছরের কুর্দি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ একপর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। ওই বিক্ষোভ থেকে ‘নৈতিকতা পুলিশের’ কার্যক্রম বাতিল এবং বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে আন্দোলনকারীরা। গত সেপ্টেম্বর থেকে চলা আন্দোলনে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে তেহরান। এরমধ্যেই কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজেদের ম্যাচের আগে নিজ দেশের জাতীয় সংগীত গাইতে অস্বীকৃতি জানান ইরানি ফুটবলাররা। বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নেয়া তাদের ওই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়ে।
ইরানের সরকারবিরোধী আন্দোলনে এটা বেশ স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকারের বিরুদ্ধে রুষ্ট মানুষের সংখ্যা দেশটিতে নেহাতই কম নয়। ১৯৭৯ সালে কথিত ইসলামী বিপ্লবের নামে দেশটিতে বট্টরপন্থিরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। তারপর থেকেই শুরু হয় দেশটিতে কট্টর শারীয়া আইন চালু হয়। শারীয়া আইন যে, মানুষের সহজাত ইচ্ছে-আকাক্সক্ষাকে দমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নিপীড়নের আশ্রয় নিয়েছে, তিব্র আস্দোণর সেই সাক্ষ্য দেয়। ইরান সরকার মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে হত্যা করেছে, নারীর মর্যাদাকে হত্যা করেছে। ৪৩ বছর ধরেই মানুষকে এক ভীতিকর ও জুলুম দ্বারা আরোপিত ব্যবস্থা চালিয়ে আসছিল দেশটি। ইরানের সাম্প্রতিক সরকার বিরোধী আন্দোলন তারই স্ফুলিঙ্গ মাত্র। ইরান সরকারের এটা বুঝতে অসুবিধা হইনি যে, হত্যা-নিপী[ড়ন চালিয়ে মানুষের সহজাত অধিকারকে আর চাপিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এছাড়া ইরানের সরকারবিরোধী আন্দোলনে বহির্বিশ্বের যথেষ্ট চাপও আছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এক রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। শারীয়া আইনের নামে নিজের দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষের উপর নির্পাতন-নিপীড়ন চালানো সম্ভব হলেও বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকাও থাকে। এটাই বাস্তবতা। আফগানিস্তান একটি নিকট উদাহরণ।
সুপরিচিত বালুচ মৌলভী আবদুল হামিদ নভেম্বরের শেষদিকে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে দমনপীড়ন, হত্যা ও গ্রেপ্তার বন্ধে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি ইরানের সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তনে গণভোট আয়োজনেরও দাবি জানান। তিনি যৌক্তিক অর্থেই বলেছেন যে, গত ৪৩ বছর ধরে চলে আসা নীতি যে অচল হয়ে পড়েছে, জনগণের এই বিক্ষোভ তাই দেখাচ্ছে। অর্থাৎ নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে মানুষকে সাময়িকভাবে বশ করা যেতে পারে কিন্তু সেটা সব সময়ের জন্য সম্ভব নয়। কেননা সমাজ ও জীবন চলমান। সময়ের প্রয়োজনে মানুষ তার চাহিদা নিরূপণ করে। সেটার অন্য কোনো নাম দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না। ইতিহাস সেই শিক্ষায় দেয়।