ইলিশের জিআই স্বত্ব || সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের গুরুত্ব আরো বাড়লো

আপডেট: আগস্ট ৯, ২০১৭, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

জামদানির পর এবার ইলিশের ভৌগলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন বা জিআই) স্বত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন শুধু সনদ হস্তান্তরের অপেক্ষা। চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে মৎস্য অধিদফতরের হাতে ইলিশের জিআই নিবন্ধনের সনদ তুলে দেয়ার আশা করছেন পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। ব্যাপারটি বাংলাদেশের জন্য সত্যিই গৌরবের। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশকে আর্থিকভাবেও লাভবান করবে- ফলে জেলেরাও উপকৃত হবেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মতে আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ‘ওয়াইপিও’র শর্ত মেনেই বাংলাদেশে ইলিশের জন্ম ও বিস্তারসহ যাবতীয় তথ্যপ্রমাণাদি পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তথ্যপ্রমাণাদি যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ শেষে চলতি বছরের ১ জুন নিজস্ব জার্নালে ৪৯ পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতর। আশঙ্কা ছিল, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার ইলিশের জিআই নিবন্ধনের ব্যাপারে আপত্তি জানাতে পারে। কিন্তু নিবন্ধন প্রকাশের দু’মাস পেরিয়ে গেলেও এ দুই দেশ আপত্তি তোলেনি বলে জানা গেছে।
এর আগে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে ইলিশের একক মালিকানা পাওয়ার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জিআই নিবন্ধনের আবেদন করে মৎস্য অধিদফতর। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর ইলিশ বিপণনের ক্ষেত্রে স্বত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকে। এর ফলে বর্তমানের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি দাম পাবেন জেলেরা।
তবে প্রতিটি স্বীকৃতি দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। ইলিশের বংশবিস্তার ও ও এর সুরক্ষার কাজটি এখন বেড়ে গেল। এমন এক সময় স্বীকৃতি মিললো যখন ইলিশের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে। এ নিয়ে গবেষণা খুবই প্রণিধানযোগ্য।
ইলিশ শুধু সুস্বাদু মাছই নয়Ñ এর পুষ্টিমান গুরুত্বও ব্যাপক। বিশেষজ্ঞদের মতে মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র, চোখের জন্য ইলিশ উপকারী। এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগে নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। ১০০ গ্রাম ইলিশে থাকে ২২ গ্রাম প্রোটিন, ১৯.৫ গ্রাম ফ্যাট, ১৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৫০ মিলিগ্রাম ফসফরাস।
ইউরোপে মাছের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপ আরও দক্ষিণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একই ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের ক্ষেত্রেও। তারা মৎসসম্পদ সংরক্ষণে কার্যকরি পদক্ষেপ না নেয়ার বদলে দিনকে দিন নতুন ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই হারে মাছ ধরা অব্যাহত রাখলে শেষমেষ মানুষ দলে দলে অ্যান্টার্কটিকায় মাছ ধরতে যাবে। বাংলাদেশেও মাছেরন অনেক প্রজাতি ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। তাই, ইলিশ নিয়ে সতর্কটাও আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো। ইলিশের বংশ বিস্তার, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সমন্বিত পরিকল্পনা চাই- চাই গবেষণা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ