ইসি গঠনে সংলাপ সমাপ্ত II শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দেশবাসীরও প্রত্যাশা

আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০১৭, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ হয়েছে বুধবার। নিবন্ধনকৃত ৩১ টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে পর্যায়ক্রমে মাননীয় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সংলাপ করেছেন। সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে মতামত ও প্রস্তাব এসেছে। ওইসব প্রস্তাব বিবেচনা করে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে বলে শেষ দিনের সংলাপে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এসব প্রস্তাব ও মতামত বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব ও মতামত শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে। দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সব রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বানও রাষ্ট্রপতি রেখেছেন। রাষ্ট্রপতি এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংলাপ করার তাগিদ দেন। তবে আওয়ামী লীগের এই উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, ইসি গঠনে সম্ভব হলে এখনই আইন প্রণয়ন কিংবা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের মেয়াদ শেষ হবে। গত বারের মতো এবারও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে নতুন ইসি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। কাজী রকিবউদ্দীন নেতৃত্বাধীন ইসি গঠনের আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান একটি সার্চ কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশের মধ্য থেকে পাঁচজনকে নিয়ে ইসি গঠন করেন। এবারও একই প্রক্রিয়ায় ইসি গঠন হবে বলে আভাস মিলেছে; যদিও বঙ্গভবন থেকে এখনও সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
সব রাজনৈতিক দলগুলোই রাষ্ট্রপতি সাথে সংলাপে ভিন্ন ভিন্ন সুপারিশ দিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশই অনুভব করেছে যে, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে আইন করা আবশ্যক। সার্চ কমিটি গঠনের ব্যাপারেও ভিন্ন ভিন্ন মত এসেছে। এসব মত কোনটি পরস্পর বিরোধী মনে হয়েছে। যেমন একটি দল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে সার্চকমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে। নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আইন করার বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক দলগুলো থেকেই নয়- নাগরিক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও দাবি উঠেছে। বরং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে দেশে অনেক লড়াই-সংগ্রাম হয়েছে। এসব সংগ্রামের অধিকাংশই রক্তক্ষয়ী ছিল। জীবনহানীসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক দলগুলো কখনই আগ্রহ দেখায় নি। তাদের মত করেই বিষয়টি নিয়ে তারা ভেবেছে এবং সেই মোতাবেকই সবকিছু চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসলেই নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি তুমুল ভাবে সামনে আসে কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলেই সব কিছু নিরব হয়ে যায়। দেশবাসীর প্রত্যাশা অবশ্যই তেমন নয়। তারা একটা স্থায়ী ব্যবস্থা চায়, যা নির্বাচন কমিশিনের স্বাধীনতা, শক্তি ও সামর্থকে প্রকাশ করে। শুধু নির্বাচন কমিশন নয়Ñসাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বনিয়ন্ত্রণে চলার উপযোগী করে তুলতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাই মূখ্য। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণে ঐকমত্যে আসতে ব্যর্থ হয়, রাষ্ট্রপতি কোনোভাবেই তা পেরে উঠবেন না। ইতোমধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে সন্দেহ অবিশ্বাসের কথা উঠেছে। এসব কিছু জনগণের কাছে ভাল কিছু ইঙ্গিত দেয় না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই রাজনৈতিক দলগুলোকেই ঐকমত্য হয়ে সমস্যার সমাধান করতে আগ্রহী হতে হবে। দেশের মানুষের তেমনি প্রত্যাশা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ