রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:
পাবনার ঈশ্বরদীতে মসজিদ, মাদরাসা, ইদগাহ ও গোরস্থানের কমিটি গঠন নিয়ে মসজিদের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারির কারণে একটি কওমি মাদরাসা গত ৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এর আগে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) মসজিদে ঢুকে ইমামসহ মুসল্লিদের মারধর ও হাতাহাতিতে মসজিদে জুমার নামাজও হয়নি।
ঈশ্বরদীর চর সাহাপুর ও দিয়াড় সাহাপুর এলাকার আশরাফুল উলুম কওমি মাদরাসার ২৫৬ জন শিক্ষার্থী ও ৬ জন শিক্ষকসহ ওই মাদরাসার মুহতামিম হামলার ভয়ে শনিবার (৩১ আগস্ট) থেকে মাদরাসায় আসছেন না।
স্থানীয় মুসল্লি, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার জুমার নামাজের আগে খুতবা পাঠের সময় খুতবা পাঠ বন্ধ করে দিয়ে আলমগীর হোসেন বাদশা নামের এক ব্যক্তি মসজিদে ঢুকে ইমামের নিকট থেকে জোরপূর্বক মাইক কেড়ে নিয়ে এই এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, ইদগাহ ও গোরস্থানের বর্তমান কমিটি বাতিল করে দুলাল সরদার নামের একজন বিএনপি নেতার নাম সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য সাজেদুল ইসলাম এ ঘোষণার প্রতিবাদ করে ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে মিজান সরদার নামের আরো একজন প্রার্থী রয়েছে বলে জানালে তাকে মসজিদের মধ্যেই মারপিট করেন বাদশাসহ তার সঙ্গে থাকা লোকজন। এ নিয়ে জুমার নামাজের আগেই মসজিদের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে হাতহাতি থেকে মারামারি বাধে।
এক পর্যায়ে খুতবা ও জুম্মার নামাজ পণ্ড হয়ে যায়। এসময় দুলাল সরদারের সমর্থনে দিয়াড় সাহাপুর থেকে আমিনুল সরদার মসজিদে এসে প্রবেশ করলে মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়ে। এসময় মোটর সাইকেল বহর নিয়ে ১৫-২০ জন যুবক এসে মসজিদ, মাদরাসা, ইদগাহ ও গোরস্থানের কমিটি পরিবর্তন করে আবারো দুলাল সরদারের নাম ঘোষণা করে চলে যায়। এসব ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদ, ইদগাহ ও গোরস্থানের সঙ্গে আশরাফুল উলুম কওমি মাদরাসার একিভূত কমিটি হওয়ায় মাদরাসার মুহতামি হাফেজ মওলানা মো. এনামুল হক মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের ছুটি দেন। ওই দিনের পর থেকে মাদরাসা বন্ধ রয়েছে। চরসাহাপুর এলাকার এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি জুলমত হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন রতন মহলদার।
এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক রতন মহলদার বলেন, আমি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে ঈশ্বরদীর বাইরে অবস্থান করছি, শুনেছি কমিটি নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে, এর বেশি কিছু জানিনা। মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মওলানা মো. এনামুল হক বলেন, ছোট ছোট শিশুরা এই পরিস্থিতিতে মাদরাসায় আসতে ভয় পাচ্ছে এ কারণে পরিস্থিতি বিবেচনা করে মাদরাসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।
ইউপি সদস্য সাজেদুল ইসলাম বলেন, মসজিদের মধ্যে জুমার নামাজের খুতবা পাঠ করার সময় ইমামের নিকট থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে মুসল্লিদের শান্ত থাকতে এবং সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করার প্রস্তাব করায় আমাকেও মসজিদের মধ্যে গায়ে হাত তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আমিনুল সরদার জানান, এতদিন এসব প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতারা দায়িত্ব পালন করেছেন, এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তারা সবাই গা ঢাকা দিয়েছে, এ কারণে আমরা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দুলালের নাম ঘোষণা করেছি। ইমাম বা ইউপি সদস্যকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা আমার জানা নেই।
হুমায়ুন কবির দুলাল বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমার সমর্থনে সভাপতি হিসেবে কেউ আমার নাম প্রস্তাব করতে পারে। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ বলেন, লোকমুখে ঘটনাটি শুনেছি কিন্তু আমার নিকট কোন লিখিত অভিযোগ করেনি কোন পক্ষ। অভিযোগ পেলে নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।