ঈশ্বরদীতে গভীররাতে যুবলীগের দুইপক্ষের গোলাগুলি || তিনজন গুলিবিদ্ধসহ আহত পাঁচ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৭, ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি


ঈশ্বরদীতে যুবলীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধসহ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। শহরের আমবাগানে একটি ক্লাবের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ তিন যুবলীগ কর্মীকে ওই রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন, আমবাগান এলাকার আফছার আলীর ছেলে শামীম হোসেন (৩৬), হাবিবুর রহমানের ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে সুমন (৩৫) ও যুবলীগকর্মী মোতালেব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঈশ্বরদী হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শামীমের নাভীর নীচে, সুমনের ডান হাতে ও মোতালেবের পায়ে গুলি লেগেছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত মসলেম উদ্দিনের ছেলে ফিরোজ হোসেন (৩৫) ও ইউসুফ শেখের ছেলে নয়ন শেখকে (৩৬) ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে অবস্থিত ‘টাইগার ক্লাবের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব সরকারের সমর্থকদের সঙ্গে ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন সোহাগের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। টাইগার ক্লাবটি দীর্ঘদিন থেকে শফিকুল ও সোহাগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাজীব সমর্থকদের অভিযোগ, রাতে ওই ক্লাবে শফিকুল ও সোহাগের সমর্থকেরা ‘বাজে’ আড্ডা দিত। এরই মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় পরদিন রাতে সোহাগের সমর্থকেরা ওই ক্লাবে পিকনিকের আয়োজন করে। ওই পিকনিক করা নিয়ে বিরোধ আরো জোরালো হয়। বৃহস্পতিবার রাতে রাজীব সরকারের সমর্থকেরা আমবাগানে একটি এলাকায় এ ধরনের খাওয়ার আয়োজন করে। এর কিছু দূরেই টাইগার ক্লাবে সোহাগ ও শফিকুলের সমর্থকরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন এবং রাজীব সমর্থকদের বিপক্ষে কথাবার্তা বলছিলেন। এমন খবর শুনে রাজীবের সমর্থকরা ওই ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিতে সেখানে যায়। এরপর দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। কয়েকদফায় সংঘর্ষ এবং গুলিবর্ষণের শব্দ পাওয়া যায়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রাত ১টা পর্যন্ত আমবাগান ও আশপাশের এলাকায় মারামারি ও ৩০-৩৫ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া গেছে। গভীর রাতে গুলির শব্দে তারা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
আমবাগান শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (টিএসআই) মতিয়ার রহমান জানান, রাজীব সরকার সমর্থকদের সঙ্গে শফিকুল ও সোহাগের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির খবর পেয়ে ওই রাতেই ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহুরুল হক ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল হাই তালুকদারের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এসময় কাউকে পাওয়া যায় নি।
ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ওই রাতে তিনি টাইগার ক্লাবে ছিলেন না। তার সমর্থিত কর্মীরা সেখানে ছিলেন। হঠাৎ রাজীবের সমর্থকরা ক্লাবের ভেতরে হামলা চালায় ও টেলিভিশন ভেঙে ফেলে। ভয়ে তার সমর্থকরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তিনি বাড়িতে শুয়ে রাত ১টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। ওই রাতে রাজীবের সমর্থকরা তার বাড়িসহ পাশের দুইটি বাড়ির প্রধান ফটকে লাটিসোঠা দিয়ে আঘাত করে ও তাকে গালাগালি করে চলে যায়।
পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন সোহাগ জানান, এ হামলার তার সমর্থকদের পক্ষ থেকে আইনের আশ্রয় নিবেন। উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাজীব সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তমাল শরীফকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল হাই তালুকদার গোলাগুলি ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দায়ের করেন নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ