ঈশ্বরদীতে গরু চুরি নিয়ে দিশেহারা মানুষ || রাত জেগে পাহারা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না গরু চুরি

আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০১৭, ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি


ঈশ্বরদীতে গরু চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। কোরবানীর ঈদের আগে আশঙ্কাজনক হারে গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় গরু খামারী ও সাধারণ কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গ্রামে গ্রামে নিজেরা রাতভর পাহারা দিয়েও ঠেকাতে পারছেন না গরু চুরি। খামারীদের অভিযোগ পুলিশের টহল কমে যাওয়ায় এবং গরু চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গরু চুরি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাতেও উঠে এসেছে। গত একমাসে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার গরু চুরি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কোরবানীর ঈদের ঘনিয়ে আসায় ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গরু চোররা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা প্রায়ই ঈশ্বরদীর বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ট্রাক ভিড়িয়ে হানা দিয়ে গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার (১১ আগস্ট) গভীর রাতে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সাহাপুর গ্রামের হরিণ বাড়ি থেকে এক রাতে ৫টি গরু চুরি হয়েছে। চুরি যাওয়া এই ৫টি গরুর দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত খামারী আইনুল হক হরিণ। পরদিন একই গ্রামের গরু খামারী মজিবর রহমানের বাড়িতে ট্রাক ভিড়িয়ে ২টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় চোররা, এই দুটি গরুর দাম প্রায় আড়াই লাখ টাকা। একইভাবে সলিমপুর ইউনিয়নের চরমিরকামারি গ্রামের হুজুর আলীর বাড়ি থেকে ২টি, উকিল খাঁর বাড়ি থেকে ৩টি গরু চুরি হয়, এসব গরুর দাম প্রায় ৪ লাখ টাকা বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। সলিমপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সানাউল হক জানান, বক্তারপুর গ্রামের ভোলা বিশ্বাসের বাড়ি থেকে ৫টি গরু, একই গ্রামের ফজলুর রহমানের বাড়ি থেকে ৩টা গরু, তিলকপুরের হবিভেড়ির বাড়ি থেকে ৫টি গরু চুরি হয়, এসব গরুর দাম প্রায় ১০ লাখ টাকা বলে জানা গেছে। পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর নলগাড়ি গ্রামের আবু সাঈদ তুফান নামের এক গৃহকর্তা জানান, তার বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে ২টি গরু চুরি করে ২টা ইঞ্জিন চালিত নসিমন গাড়িতে ওঠানোর পর আরো দুুটি গরু নেওয়ার সময় তারা টের পেয়ে এগিয়ে এলে ২টি গরু ফেলে গাড়িতে তোলা ২ টি গরু নিয়ে পালিয়ে যায় চোররা। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রাম থেকে গত এক মাসে প্রায় ৫০টির মত গরু চুরি হয়েছে বলে গরু খামারীরা জানান। এসব গরুর মধ্যে অধিকাংশই উন্নত জাতের দুধেল গাভী ও কোরবানীর জন্য কেনা ষাঁড় রয়েছে। প্রতিটি দুধেল গাভীর দাম ১ থেকে ২ লাখ এবং কোরবানীর ষাঁড়ের প্রতিটির দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। সর্বশেষ গত রোববার দিবাগত গভীর রাতে ঈশ্বরদীর নারিচা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে ৪টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে চোররা। এই চারটি গরুর দাম প্রায় আড়াই লাখ টাকা। পরদিন সোমবার সকালে গোয়াল থেকে গরু বের করতে গিয়ে শফিকুল দেখতে পান তার গোয়াল শূন্য। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, এক রাতেই আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
চরমিরকামারী গ্রামের হুজুর আলী অভিযোগ করে জানান, তার বাড়ি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা দামের ২টি গরু চুরি হওয়ার পর তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন, গরু চোরকে ধরিয়ে দেওয়ার পরও পুলিশের নিস্ক্রিয়তার কারণে ধরা পড়া চোরের কাছ থেকে গরু উদ্ধার করতে পারে নি পুলিশ। ওই গরু চোরকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দিলেও গরু উদ্ধার করতে পারে নি পুলিশ। একই এলাকায় ফের গরু চুরি হয়েছে অথচ এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয় নি বলে জানান এলাকাবাসী।
এদিকে গরু চুরি ঠেকাতে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ইউনিয়নে ও গ্রামে রাত জেগে গরু পাহারা দিচ্ছেন গরুর মালিকরা। এ বিষয়ে সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুুল মজিদ বাবলু মালিথা জানান, গরু চুরি রোধ করতে ইতোমধ্যে কমিউনিটি পুলিশের এক সভায় ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার জহুরুল হক, থানার ওসি আজিম উদ্দীন, গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর আলমগীর জাহানসহ পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতীতে এলাকাবাসী গরু চুরির বিষয়টি তুলে ধরে। সভায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও গ্রামে পালাক্রমে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কয়েকদিন আগে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও গরু চুরি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন প্রামানিক। এসব বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দীন বলেন, ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় গরু চুরি হচ্ছে, যারা এজাহার দিচ্ছেন তাদের মামলা গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণও করছে পুলিশ, গরু চুরির মামলায় চার্জশীটও দেওয়া হয়েছে, তারপরও বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু চুরির খবর আসছে। গরু চুরি ঠেকাতে আগের চেয়ে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ