বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী (পাবনা) :
বর্ষার পানিতে পাবনার ঈশ্বরদীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক টিপু সুলতান রোডের সর্বনাশ হয়েছে। প্রথম শ্রেণির পৌর শহর ঈশ্বরদীর যে অঞ্চলে স্থাপন হচ্ছে রূপপুর প্রকল্পের মত দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প। সেই এলাকায় যাতায়াতের অন্যতম পৌর শহরের ব্যস্ততম রাস্তা সাঁড়াগোপালপুর টিপু সুলতান রোডের দুর্দশা এখন এতটাই নাজুক অবস্থায় এসে ঠেকেছে যে, এ সড়কে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নিত্যদিনের ঘটনা আর দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ব্যপার পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে এই রাস্তার কাজ ‘হবে-হচ্ছে করে’ কাজ আর হয়নি। চলতি বছরেও কাজ হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই রাস্তা দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ঈশ্বরদী ইপিজেডে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক ও বিদেশি নাগরিকরা চলাচল করেন প্রতিদিন। এছাড়া শ্রমিক পরিবহনের ইঞ্জিনচালিত ছোট-বড় শত শত যানবাহন, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক আর পদ্মা নদীর বালু বহনকারী ট্রাক্টর, দশ চাকার ড্রাম ট্রাকের চলাচলে চব্বিশ ঘণ্টা ব্যস্ত থাকে এ সড়ক। একদিন বৃষ্টি হলে এ সড়কে পানি জমে থাকে কয়েকদিন। পানি জমে থাকতেই আবারো বৃষ্টি হলে জমে থাকা পানি দ্বিগুন হয়। রাস্তার পাশে ড্রেন না থাকায় পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই।
এভাবে মাসের পর মাস ধরে একটি সড়ক ভেঙে-চুরে, পানি-কাদায় একাকার হয়ে থাকলেও প্রতি বছর অপেক্ষা করতে করতে শুরু হয়েছে আরো একটা বর্ষাকাল। এ বছর বর্ষাকাল শুরুর আগেই এ সড়কে জলাবদ্ধতায় আরো দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা তানজিরুল আলম মিটো বলেন, এমনিতেই রাস্তা ভাঙাচোরা তার ওপর রাস্তার গা ঘেঁষে জন্ম নেওয়া ঝোপঝাড়ের কারনে সন্ধ্যার পর এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায়না। বৃষ্টি এলে রাস্তায় কাদা-পানি আর পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে। বড় বড় খানাখন্দে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেন না থাকায় বৃষ্টির পানি রাস্তাতেই জমে থাকে দিনের পর দিন। জলমগ্ন রাস্তায় যানবাহন চলাচলের সময় প্রায়ই গাড়ি উল্টে পড়ে।
পাকা সড়কের বড় বড় গর্তে স্থানীয় ট্রাক চালকরা নিজেরাই বালু ফেলে দিয়ে গর্ত ভরাট করার চেষ্টা করলেও দুদিন যেতে না যেতেই দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। সরেজমিন দেখা গেছে, টিপু সুলতান রোডটি ঈশ্বরদী শহর থেকে সাঁড়াগোপালপুর, বকশিরচক তালতলা হয়ে ঈশ্বরদী ইপিজেড, পাকশী পেপার মিল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প হয়ে লালন শাহ সেতু পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ পৌরসভার, রাস্তার পাশের অংশ রেলওয়ের এবং অন্য অংশ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের। প্রথম শ্রেণির ঈশ্বরদী পৌরসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও শহরের রেলওয়ে গেট থেকে ঈশ্বরদী ইপিজেডে যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। বহু বছরের পুরনো এই সড়কে সারাবছরই ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয় চলাচলরত সব ধরনের যানবাহন ও সাধারণ মানুষকে।
ইপিজেডে প্রতিদিন চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, প্রতিদিন ভাঙা রাস্তায় গাড়ি ভেঙে-উল্টে দুর্ঘটনায় পড়ে। প্রতিদিন একাধিক গাড়ি রাস্তায় বিকল হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকে। ফলে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে চলাচল করতে হয় তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা খন্দকার তৌফিক আলম সোহেল জানান, রাস্তাটির ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজনের ভারী যানবাহনের অবাধ চলাচলের কারনেই রাস্তাটি বারবার ভেঙে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির পানি ভাঙাচোরা অংশে জমে গিয়ে রাস্তাটি অল্প সময়েই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর আগে এ রাস্তা ঘেঁষে পুরনো পাইলট লাইন উপড়ে ফেলে নতুন রেললাইন স্থাপন কাজ শুরু হলে আরেক দফা ভেঙে পড়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানের অংশ। সংস্কারের জন্য রেলওয়েকে একাধিকবার চিঠিও দিয়েছে ঈশ্বরদী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী বীরবল মন্ডল বলেন, পৌরসভা রেলওয়ের নিকট চিঠি দিয়েছে তবে আপাতত এ রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্ত নেই।
ঈশ্বরদী পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, এ রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনে অনধিক ২০ টন ওজন ধারণ ক্ষমতা অথচ এ রাস্তায় প্রতিদিন বালুবাহী ড্রামট্রাক অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচল করে ফলে রাস্তাটি নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে গেছে। ঈশ্বরদী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ বলেন, এ রাস্তা সংস্কার নয়, নতুন করে তৈরি করা হবে। একনেকে এই সড়কের বাজেট পাশ হয়েছে। আশা করছি চলতি বর্ষাকাল শেষ হওয়ার পর পরই কাজের অগ্রগতি শুরু হবে।