সোমবার, ১৬ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী:
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নটি পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষা। পদ্মার চর থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে ‘ইট ভাটা চালানোর সুবিধা’র কারণে এই এক ইউনিয়নেই একে একে গড়ে উঠেছে ৪৮টি ইট ভাটা। যার সবগুলোই অবৈধ।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) ওই ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ইট ভাটা স্থাপন করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদনও নেয়া হয়নি। তবে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই চলছে এসব ইট ভাটা। সবচেয়ে অবাক করার মত ঘটনা যে, যেখানে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা সেখানে শুধু কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট।
তাও আবার ইট ভাটায় ‘স’ মিলের আদলে করাতকল বসিয়ে প্রকাশ্যে কাঠ কেটে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কোন রকম রাখ ঢাক ছাড়াই। ঈশ্বরদীর লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর, লক্ষীকুন্ডা, বাবুলচরা ও কামালপুর গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, এসব গ্রামের বিভিন্ন স্থানে সারি সারি ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
ইট ভাটার মালিকরা জানান, কয়লা দিয়ে ইট তৈরি করলে লাভ হয়না তাই স্থানীয় প্রশাসন ও কতিপয় প্রভাবশালীদের ‘ম্যানেজ’ করে কয়লার পরিবর্তে তারা কাঠ পুড়িয়ে ইট বানাচ্ছেন। গাছ বা কাঠ পোড়ানো অন্যায় জেনেও তারা অতিরিক্ত লাভ করার আশায় কাঠ পোড়াচ্ছেন বলে স্বীকার করেন তারা।
ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. রাজা আলী বলেন, বিভিন্ন মহলকে নিয়মিত টাকা দিয়ে এসব ইট ভাটা চালানো হচ্ছে। লক্ষীকুন্ডা গ্রামের একটি ভাটার ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, আমাদের কোন লাইসেন্স নাই, পরিবেশ অধিদপ্তরেরও কোন অনুমোদন নাই। স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করেই ভাটা চালু রেখেছেন ভাটার মালিকরা।
এমএমবি ব্রিকস, এসআরবি ব্রিকস, এমআর ব্রিকসসহ বেশ কয়েকটি ইট ভাটার মালিক-ম্যানেজারদের প্রশ্ন করলে তারা বলেন, আমাদের সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ম্যানেজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। ইট ভাটা সচল রাখতে বড় বড় গাছের গুড়ি ভাটায় এনে ভাটায় স্থাপন করা করাতকলের মাধ্যমে কাঠ কেটে টুকরো করে ভাটায় পোড়ানোর উপযোগি করে তোলা হয় বলেও জানান ভাটা মালিকরা।
ঈশ্বরদী ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয় হোসেন বলেন, সব স্থানেই তো অনিয়ম হয়, আমরা করলে দোষের কী? তাছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে উপজেলা প্রশাসনকে আমরা টাকা দেই।
এসব অভিযোগ অস্বিকার করে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের অবৈধ ইটভাটার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে প্রাথমিকভাবে দুটি ভাটায় ৫০ হাজার করে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এদিকে এসব ইট ভাটার জন্য গ্রামের বিভিন্ন এলাকার ফসলী জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। ‘ফসলী জমি নষ্ট করে ইট ভাটা নয়’-প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনাকেও মানছেন না এসব ইট ভাটার মালিকরা। ভাটার আশে পাশের শত শত বিঘা জমি থেকে দেদারসে মাটি কেটে ট্রাকে করে আনা হচ্ছে ইট ভাটায়। পদ্মা নদীর চর এলাকায় সরকারি খাস জমি থেকেও বড় বন্মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে লোড করে ভাটায় নেয়া হয়। স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকরা জানান, ইট ভাটা মালিকরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালি হওয়ায় তারা বাধা দিতে পারেন না।
ফসলী জমি থেকে দেদারসে মাটি কাটার কারনে সব্জি উৎপাদন এলাকা খ্যাত লক্ষীকুন্ডায় আবাদী জমি ক্রমেই হ্রাস যাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় কৃষকদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। কৃষক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে তারাও চিন্তিত। ইট ভাটায় ফসলী জমির মাটি কাটা বন্ধ করতে কৃষকরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারপত্র পাঠাবেন বলে জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরুল কায়েস বলেন, ফসলী জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে প্রশাসন খুব শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করবে।