ঈশ্বরদীর শিশু জিহাদ হত্যার রহস্য উদঘাটন

আপডেট: জুলাই ৭, ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ণ

ঈশ্বরদীর শিশু জিহাদ হত্যার রহস্য উদঘাটন

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:


বিকৃত রুচির যৌন আকাঙ্খা চরিতার্থ করতেই ৯ বছর বয়সী শিশু জিহাদকে গলাটিপে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত যুবক, হত্যা-ডাকাতি মামলার আসামী মোঃ আসিফ (৩১)। পুলিশ ও সাংবাদিকদের নিকট এ কথা স্বীকার করেছে সে। রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের উদ্যোগে থানা চত্বরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পাবনার ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের নিকট চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তিমূলক ঘটনা বর্ণনা করেন।

এসময় শিশু জিহাদকে হত্যায় অভিযুক্ত গ্রেপ্তার মোঃ আসিফকে সঙ্গে নিয়ে ঈশ্বরদী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট আসিফের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, আসিফ একজন বিকৃত রুচির মাদকাসক্ত যুবক। তার বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় হত্যা ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার মুনসিদপুর তেতুলতলা সিএন্ডবি গোডাউনের নিকট একটি পরিত্যক্ত ভাঙা ভবনের বারন্দায় ইয়াবা সেবন করছিল সে।

এসময় বন্ধুদের সঙ্গে বৈকালিক খেলাধুলা শেষে সেখান দিয়ে বাড়ি ফিরছিলো শিশু জিহাদ। তাকে একা পেয়ে আসিফ তার বিকৃত রুচির যৌন আকঙ্খা চরিতার্থ করতে জিহাদকে ফাঁকি দিয়ে ডেকে নিয়ে তাকে শারিরিকভাবে যৌন নির্যাতন করতে উদ্যত হয়। এতে ভয় পেয়ে শিশু জিহাদ চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ও গলা টিপে ধরে আসিফ। কিছুক্ষণের মধ্যে শিশুটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মৃত্যুর পর জিহাদের পরিহিত প্যান্ট ও স্যান্ডেল জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে লাশ গুম করার জন্য পাশের রুমে পড়ে থাকা পুরাতন একটি প্লাস্টিকের পাটি এনে জিহাদের বিবস্ত্র মৃতদেহ ওই পাটিতে মুড়িয়ে কোলে করে পরিত্যাক্ত ওই ভবনের পাশের একটি মরা নারিকেল গাছের তলায় ঝোপের মধ্যে রেখে ধ্রুত পালিয়ে যায় আসিফ।

জিহাদ হোসেনের বড় ভাই সুমন বলেন, গত শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে তেঁতুলতলা পরিত্যক্ত খাদ্য গুদামের নিকট সহপাঠীদের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজে খেলাধুলা করছিল জিহাদ। এর পর থেকে তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাতে এলাকায় মাইকিং করা হয়। রাত ১২টার দিকে তেঁতুলতলা গোডাউনের ভেতরে জিহাদের হাফপ্যান্ট ও স্যান্ডেল পাওয়া যায়। রাতভর খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে শনিবার ভৌর ৫টার দিকে গোডাউনের ঝোপের মধ্যে বিবস্ত্র অবস্থায় পাটিতে জড়ানো মরদেহ পাওয়া যায়।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার ভৌরে লাশ উদ্ধারের পর গোয়েন্দা ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে হত্যাকারীর নাম পরিচয় নিশ্চিত হয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করতে দুটি পৃথক টিম গঠন করে অভিযান চালানো হয়। আসামী আসিফ তার গাড়ি ফেলে রেখে নাটোরের বনপাড়া হয়ে অন্য এলাকায় পালানোর চেষ্টা করছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার দুপুরেই তাকে বনপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিহত জিহাদ হোসেন মুনসিদপুর গ্রামের প্রবাসী হাসেম আলীর ছেলে ও দাশুড়িয়ার আব্দুস সাত্তার কিন্ডারগার্টেনের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। জিহাদকে হত্যাকারী আসিফ হোসেন ঈশ্বরদীর মানিকৈড় গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। পেশায় সে একজন পাওয়ারট্রলি চালক। প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের নিকটও আসিফ এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে উল্লেখিত ঘটনা ও বিকৃত মানসিকতার অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। প্রেস ব্রিফিং শেষে রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে অভিযুক্ত আসিফকে আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে নিহত জিহাদের মা শিউলি বেগম বাদী হয়ে আসিফকে প্রধান আসামী করে ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ