উচ্চরক্ত চাপের ওষুধ যারা খাচ্ছেন তারা সাবধান

আপডেট: মার্চ ১১, ২০১৭, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

ফিজিও জিএম শামীম


রক্তচাপ বেশি হলেই যে, ওষুধ খেতে হবে এই ধারণা আজকাল বিজ্ঞানীরা মানতে চান না। অত্যন্ত সাবধানের সঙ্গে রক্তচাপ মেপে উপযুক্ত ক্ষেত্রে কেবল ওষুধ খেতে হবে। তা না হলে রোগির বিপত্তি ঘটতে পারে। রক্তচাপের ওষুধ খেতে হবে জীবনভর, ওষুধ ছাড়া যাবে না। হঠাৎ ওষুধ ছাড়া বন্ধ করলে অবস্থা বিপজ্জনক হতে পারে। তা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতো আছেই। দীর্ঘদিন এ ওষুধ ব্যবহারের ফলে মানসিক উত্তেজনা, বিষন্নতা, হৃদ-ছন্দের বৈষম্য, অ্যানজাইনা, গ্লুকোমা, এমনকি সঙ্গমে অক্ষমতা, যকৃতের রোগ, বহুমূত্ররোগ দেখা দিতে পারে। অথচ এগুলো একবার ধরলে ছাড়ার আর উপায় নেই। তাই এর বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা করছে বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন লবণ খাওয়া কমানো গেলে উচ্চরক্ত চাপ কমানো সম্ভব। কয়েক বছর আগে পৃথিবীর সবচাইতে নামি-দামি মেডিকেল জার্নাল সেটেল্যানে এ সম্বন্ধে সম্পাদকীয় নিবন্ধ বের হয়েছিল। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ যতই বের হচ্ছে চিকিৎসকরা ততই লবণ খাওয়া কমানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আমেরিকার সিনেসেটোয় মেয়ো ক্লিনিকের গবেষকরা প্রায় পাঁচ বছর ৪০০০ উচ্চ রক্তচাপ রোগি (যাদের বয়স ১৮-৫৯ বছর) কম লবণ ও ক্যালরি খাবার দিয়ে দেখেছেন সবার ক্ষেত্রে ০.৮৫ শতাংশ রক্তচাপ থেকে ০.৫১ শতাংশে এসে সুস্থিত হয়েছে। এ গবেষকদের প্রধান ছিলেন ড. জেমস হান্ট। উচ্চ রক্তচাপ রোগিদের প্রতিদিন একচামচের কম লবণ খায়ানো হয়েছিলো ফলে ০.৮৫ শতাংশ রোগির ক্ষেত্রে  এ সাফল্য এসেছিলো। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের গবেষকরাও এ ধরনের গবেষণায় সাফল্য পেয়েছে।
রক্তচাপের অপর ওষুধ হলো ব্যায়াম। আমেরিকার হুস্টনের বেলায় কলেজের গবেষকরা ১১৫ জনের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখেছেন ৮ সপ্তাহ্ অ্যারোবিক ব্যায়ামের ফলে রক্তচাপসহ ওজন কমেছে। বার্হিংহামের আলবামা মেডিসিন স্কুলের অধ্যাপক হেরিয়েট ডাস্টনের অভিমত হলো রক্তচাপ রোগিদের ক্ষেত্রে ওজন কমানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অধিকাংশ উচ্চরক্তচাপ রোগির ওজন বেশি হয়। আদিমকালে মানুষের রক্তচাপ খুব একটা বেশিছিলো এমন শোনা যায় না। তার কারণ তাদের মধ্যে স্থূলতা পাওয়া ছিলো বিরল। সম্প্রতি আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শরীর মন রিলাক্স রাখতে পারলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা যায়। সম্প্রতি প্যারিসে হৃদরোগ কংগ্রেসের গবেষকরা বলেন, যাদের মন ও শরীর রিলাক্স থাকে তাদের রক্তচাপ অন্যদের তুলনায় স্বাভাবিক। শরীর আর মন রিলাক্স করতে ব্যায়াম এবং মেডিটেশনের কোনো বিকল্প নাই। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ধাপ তিনটি- লবণ কম খাওয়া, ব্যায়াম এবং শরীর মন রিলাক্স রাখা। ইঞ্জিয়ানার গবেষক  ডা. রবিনসনের ভাষ্যমতে “আমরা উচ্চ রক্তচাপের ভয়ে ভীত হয়ে আছি”। মধ্যম বয়সের লোকদের উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে মৃদু। ৭০ বছর বয়সের পর বরং এটি একটি সুরক্ষাকারী ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। এ বয়সে স্বাভাবিকভাবে সিস্টোলিক চাপ বাড়ে ( যখন হৃৎপি- পাম্প করতে থাকে) তবে ডায়স্টোলিক চাপ (যখন হৃৎপি- বিশ্রাম নেয়) সাধারণত স্থির থাকে। নাড়িঘাতের এ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা উচিত নয়। তাই ওষুধ খাবেন ‘বুঝিয়া-সুঝিয়া’। রক্তচাপের ওষুধগুলো মারাত্মক হতে পারে। এছাড়াও অধিকাংশ ওষুধে আছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সচারত যে ওষুধগুলো আছে সেগুলো বিপদমুক্ত নয়। যারা এ ওষুধগুলো খাচ্ছেন তারা হঠাৎ ছেড়ে দিলে রক্তচাপ বেড়ে স্ট্রোকে পড়তে পারেন। স্ট্রোক-প্যারালাইসিসের প্রধান একটা কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপের কারণে ব্রেন এর থিন আরটারিগুলো ছিঁড়ে যায়। ব্রেনের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বাধে। যার ফলে ব্রেন এর স্বাভাবিক কাজ কর্ম ব্যাহত করে। তাই রবিনসন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক উপায়ের উপর জোর দিয়েছেন। তাই প্রতিদিন চা-চামচের তিনভাগের একভাগ করে লবণ খাওয়া কমান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, শরীর মন রিলাক্স রাখুনÑ দেখবেন রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আপনাদের আরো ভালো হবে, যদি একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছে গিয়ে অ্যারোবিক ব্যায়াম ও মেডিটেশনগুলো শিখে নেয়া এবং ৮ সপ্তাহ প্র্যাকটিস করা সম্ভব হয়। সবাই সুস্থ থাকুন।
লেখক : রিসার্চ ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশান সেন্টার