উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় প্রতিদিনের জন্য চালু হোক

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে বাংলা ভাষায় রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ১ ফেব্রুয়ারি এক রিট মামলায় বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী ওই রায় ঘোষণার আগে বিচারপতি নাইমা হায়দার বলেন, ‘আজ ১ ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাস আজ থেকে শুরু। ভাষাশহিদদের আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজকের প্রথম রায়টি বাংলায় ঘোষণা করছি। বিশ্বের সব বাংলা ভাষাভাষীর প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলায় এ রায় ঘোষণা করছি।’
এ সময় অর্পিত সম্পত্তি-সংক্রান্ত একটি মামলার রুল নিষ্পত্তি করে তা শুনানির জন্য পুনরায় অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়ার রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই ঘোষণা সময়ের প্রয়োজনীয়তা বা দাবিকেই সামনে এনেছে। অর্থাৎ দেশের মানুষের কাছে এটিই কাক্সিক্ষত- যা একুশের অঙ্গীকারের মধ্যেই প্রতিফলিত। তারপরও সমস্যাটা কোথায় সর্বস্তরে বাংলা চালুর ক্ষেত্রে? সমস্যাটি বোধকরি আমাদেন মানসিকতায়, মননে।
বাংলাদেশে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বটে; কিন্তু প্রকৃত অবস্থা হলো সর্বস্তরে বাংলা চালু করা স্বাধীনতার ৫১ বছরেও সম্ভব হয়নি। কেন হয়নিÑএ প্রশ্নের উত্তর সন্তোষজনক নয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বাংলা চালু হলেও বাংলা এখনো উচ্চশিক্ষার বাহন হয় নি। বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, প্রকৌশলসহ বহু বিষয়ে বাংলায় পাঠ্যপুস্তক রচনা করা সম্ভব হয় নি। অথচ চিন, জাপান, কোরিয়াসহ বহু উন্নত দেশ মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার সব দরজাই খুলে দিয়েছে। সরকারি কাজকর্মে বাংলা চালু থাকলেও ব্যবসায়-বাণিজ্য, গবেষণাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ইংরেজি প্রাধান্য পেয়ে আসছে। বাংলায় আইন প্রণীত হয়েছে অথচ উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা চালু হয়নি। যদি আমরা নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে দাবি করি, তা হলে শিক্ষা, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে আমাদের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিভাষা, অভিধানসহ সম্ভাব্য সকল উপকরণ সহজলভ্য করবার মাধ্যমে ভাষাচর্চার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
উচ্চ আদালত বাংলায় রায় প্রদান করে সর্বস্তরে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদ তৈরি করেছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। তবে এটাই প্রত্যাাশিত যে উচ্চ আদালতের শুধু একদিনের জন্য সব দিনের জন্যই বাংলায় রায় প্রদানের সবিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি সম্ভব হলে দেশের সাধারণ মানুষ দারুণভাবে উপকৃত হবেন। মানুষ জটিল পরিস্থিতি এড়াতে পারবেন, ব্যয় সাশ্রয় করতে পারবেন এবং প্রতারণার কবল থেকেও রক্ষা পাবেন। শুধু ইংরেজি না জানার কারণে সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়িত নানাবিধ সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।
উচ্চ আদালতে বাংলা চালু করতে পারলে উচ্চ আদালতই অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বস্তরে বাংলা চালু করতে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পারবে। আমরা সেই প্রত্যাশায় রইলাম।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ