বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
শিক্ষায় এসব কীসের ইঙ্গিত? যাদেরকে কোমলমতি বলা হয়- তাদের মধ্যেই অনেকের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলতার দেখা মিলছে। তারা মাদকে অভ্যস্থ হচ্ছে, সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই প্রবণতা অশনিসংকেত। সময় এখনই, উচ্ছৃঙ্খল প্রবণতার রাশ শক্ত করে টেনে ধরার।
সমাজে নানা সমস্যা- সঙ্কট আছে সেগুলোর সমাধানে সরকার কাজ করছে। কিন্তু বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া চরিত্র-বৈশিষ্ট্য, উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদক সেবনের মত সমস্যাটি অত্যন্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। যখন শিক্ষার্থীদের মানুষ হিসেবে শক্ত ভীত গড়ার সময় তখনই তাদের মধ্যে মাদক সেবন, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রবণতা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক কিছুরই ইঙ্গিত দেয়।
সোনার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মোবাইল ফোনে চ্যাটিং, সিগারেট ও গাঁজা সেবনকে কেন্দ্র করে পাবনা জেলা স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির বেশকিছু শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ৭ম শ্রেণির কতিপয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুর পৌনে তিনটার দিকে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এই হামলায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
এটা শুধু পাবনা জেলা স্কুলের চিত্র নয়, দেশের সবখানেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন প্রায়ই এমন ঘটনার কথা শোনা যায়। এখন বিষয়টি সীমিত পর্যায়ে আছে কিন্তু পাবনার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। সমাজের তিব্র দ্বান্দিকতা ও অস্থিরতার ছায়া যে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এর জন্য এককভাবে কাউকে দায়ি করা যাবে না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীসুলভ আচরণ করবে না, এটা শিক্ষার সাথে যায় না। এর জন্য যেমন অভিভাবক এককভাবে দায়ি নয়- তেমনি শিক্ষক, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিও কম দায়ি নয়। এসব কিছুর প্রভাব-প্রবণতা শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে। সমাজে দুর্বৃত্তায়ন সহনশীলভাবে মান্য করা হলে তা সব শ্রেণির মানুষকে প্রভাবিত করে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও এটা ব্যতিক্রম কিছু নয়। ছোটরা বড়দের অনুকরণ, অনুসরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। ইদানিং দেশে ‘কিশোর গ্যাং’ শব্দটি খুবই আলোচিত। এদের শুধু বখেটে বলেই দায় এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ হবে না। দায় সমাজের দায়িত্বশীলদেরই নিতে হবে। একই সাথে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকেও আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
সোনার দেশ এর ওই প্রতিবেদনে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বহীনতাও তার বক্তব্যের মধ্যেই ফুটে উঠেছে। তিনি ১৫ মাস ওই স্কুলে যোগদান করেছেন এবং জেনেছেন তার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক সেবন, র্যাগিংসহ নানা ঘটনারসাথে জড়িত। অথচ কোনো দায় নেন নি, পদক্ষেপও গ্রহণ করেন নি তিনি। শিক্ষকতা করতে হলে অভিভাবকত্ব অস্বীকার করা যায় না। শিক্ষা ব্যবস্থায় এই অভিভাবকত্বের বড়ই অভাব লক্ষনীয়। শিক্ষকতাকে শুধুই চাকরি মনে করলে অভিভাবক হওয়া যায় না। সর্বক্ষেত্রেই দায়িত্বশীল অভিভাবকত্বে অভাব রয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা যে আত্মঘাতি প্রবণতার দিকে ঝুঁকছে তা নিরসনে সমাজের সর্বক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।