উত্তরাঞ্চলে তীব্র লোডশেডিং, অতিষ্ঠ জনজীবন

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ১০:৪৫ অপরাহ্ণ

মাহাবুল ইসলাম ও সাজেদুল ইসলাম সাজু


উত্তরের বেশকিছু জেলায় তীব্র লোডশেডিং হচ্ছে। তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাওয়া লোডশেডিঙে বিপর্যস্ত জনজীবন। লোডশেডিঙের কারণে এ অঞ্চলের শিল্প-কারখানাগুলোতে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।



রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের লোডশেডিং অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ দুই বিভাগের ১৬টি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, গত সোমবার থেকে জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গ্রাহককে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

নেসকো বলছে, লোডশেডিং বাড়লে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে যায়। ফলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। রংপুরের জেলাগুলোতে প্রতি তিন ঘণ্টা পর এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। রাজশাহীর পরিস্থিতিও একই। জেলার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তাদের অবস্থা আরও খারাপ। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পিক আওয়ারে চাহিদার ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎও মিলছে না বলে সমিতি জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরের বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুতের এমন লোডশেডিং গত কয়েক দিনের চিত্র। ভ্যাপসা গরমের মধ্যে এমন লোডশেডিঙে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। রাজশাহীর কয়েকটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তাদের লোডশেডিং নেসকোর চেয়ে বেশি। এতে সেচ সংকটে পড়েছে গ্রামের কৃষক।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রাজশাহী জেলার জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক রমেন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিই না। আমাদের বিদ্যুৎ আসে রাজশাহীর কাটাখালী উপকেন্দ্র থেকে। সেখান থেকেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পিক আওয়ারে বড় জোর ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। বাকি সময়ও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। দিনে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট। আর রাতে পিক আওয়ারে চাহিদা থাকে ৬০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট।

নেসকোর রংপুর জোনের প্রধান প্রকৌশলী (অপারেশন) আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, গতকাল (বুধবার) থেকে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। আমাদের ৮ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে এখন আমরা পাচ্ছি প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট। প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর সব এলাকায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়লে চাহিদা কমে না, বাড়ে। ফলে আমরা চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। পরিস্থিতির কবে উন্নতি হবে বলতে পারছি না। কেন এই অবস্থা সেটাও জানি না।

নেসকোর রাজশাহী জোনের প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায়ও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। প্রতি ঘণ্টায় ১০৭ থেকে ১১০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আজ দুপুর ১২টায় রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ পাওয়া যায় ১ হাজার ১৭০ মেগাওয়াট। বাকিটা লোডশেডিং করতে হয়েছে।

জাকির হোসেন আরও বলেন, আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। উৎপাদন কম হচ্ছে বলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভবত আরেকটা পাওয়ার স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সমস্যা বেশি হচ্ছে। কবে সমস্যার সমাধান হবে সেটা আমরা বলতে পারি না।

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত কয়েকদিনে লোডশেডিংয়ের মাত্রা ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে। লোডশেডিঙের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাসহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে।
এদিকে লাগামহীন লোডশেডিং চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেও। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন এলাকার গ্রাহকরা রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও গ্রাহকরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছেন গৃহিণীরাও। গরমে ঘরে অবস্থান করাও তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ছে। চার্জার ফ্যান দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারছেন না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার গৃহিণী ইরিন আক্তার বলেন, বিদুৎতের যন্ত্রণায় পাগল হওয়ার অবস্থা। বাচ্চারাও পড়াশোনা করতে পারছেনা। তীব্র গরমে স্কুলে গিয়েও অস্বস্তি। ছেলেটার জন্য (চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র) চার্জার ফ্যান কিনতে গিয়েও পাওয়া যায়নি।
চাল শিল্পের প্রতিষ্ঠান হক অটো রাইস মিলের মালিক ও চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. হারুন অর রশীদ বলেন, দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না তারা। বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন কমেছে, খরচও কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তারা বেকায়দায় রয়েছে।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার জন্য বিদ্যুৎতের মোট চাহিদা প্রায় ৩৩ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ২২ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

নেসকো চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল আজিম বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক। ফলে লোডশেডিং চলছে। সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি না, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমাদের প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার গ্রাহক। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। ফলে আমাদের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনে ৪০ শতাংশ লোডশেডিং চলছে। পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়ে উৎপাদন-সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ