উত্তরাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা! ‘পূর্ব অভিজ্ঞতায় বন্যার শঙ্কা আপাতত নেই-পাউবো’

আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২৪, ১১:৩৩ অপরাহ্ণ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:


ভারতের মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার গঙ্গা নদীতে অবস্থিত ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। তবে এই গেট খুলে দেয়ার কারণে রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় পদ্মা নদীর পানি বেড়ে বন্যার শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতায় বন্যার শঙ্কা নেই বলছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সম্পর্কিত নানা ধরনের পোস্ট শেয়ার করছেন স্থানীয় ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। ছড়াচ্ছেন নানা গুজবও। স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সেচ্ছাসেবীরাও সাবধান থাকার আহ্বান সংবলিত পোস্টে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, লাইফ জ্যাকেট সংগ্রহ করে রাখার পরামর্শ দিয়ে পোস্ট শেয়ার করছেন। এতে জনমনে আতঙ্ক আরও বাড়ছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাসিন্দা তইয়ব আলী বলেন, ফারাক্কা বাঁধ ছেড়ে দিয়েছে। সবাই মোবাইলে দেখছে, আর বলছে, নিচু এলাকা ডুবে যাবে। আমার দুই বিঘা ধান আছে বিলের ধারে। সঙ্গে কপির আবাদ আছে। আবাদগুলো নিয়েই এখন ভয়ে আছি।

উপজেলার দামকুড়ার বাসিন্দা আলিফ আলী বলেন, আমার বাড়ি নিচু জমিতে। একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এখন বন্যার খবর পাচ্ছি। বন্যা হলে আমার বাড়ি-ঘর সব ডুবে যাবে।
তবে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ফারাক্কার ১০৯টি বাঁধ পূর্বেও বেশ কয়েকদিন ধরে যতবারই খোলা হয়েছে, পদ্মার পানির বিপদসীমা অতিক্রম করে নি। এখানে বিপদসীমা হলো ১৮ দশমিক ৫ মিটার। সোমবার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩০ মিটার। গত এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৬ দশমিক ৩৮ থেকে ১৬ দশমিক ৪০ মিটার। সোমবার বিকেলে ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দিয়েছে। তারা খুলে দেয়ার বিষয়টি আগেই জানিয়েছে বলে দাবি করেছে। যদিও আমরা আগে থেকে সবকিছুর প্রস্তুতি নিয়ে আছি। আর যেহেতু এখন পর্যন্ত পানি এসে পৌঁছায় নি। সুতরাং আগেই বলা যাচ্ছে না বন্যা হতে পারে। পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আপাতত শঙ্কা নেই। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা কয়েকদিন পরে বোঝা যাবে।

এই কর্মকর্তা বলছেন, রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ বেশ সুরক্ষিত। এটি ভেঙে যাওয়ার যাওয়ার মতো হাই রিস্ক আপাতত নেই। আমরা রাজশাহী শহরসহ প্রত্যেকটি বাঁধে পরিদর্শক পাঠিয়ে চেক করছি। প্রত্যেকটি সুইস গেট মনিটরিং করছি। কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে সেখানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পাঁচ হাজার জিও ব্যাগও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, রাজশাহীতে পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। গত ১৭ আগস্ট পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৫৪ মিটার। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় সেটি বেড়ে হয় ১৬ দশমিক ২৪ মিটার। শনিবার ও রোববার একই অবস্থা ছিল। সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৩০ মিটার। এদিন সকাল ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ২৭ মিটার। ফলে এখন রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমার ২ দশমিক ২০ মিটার নিচে রয়েছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, পাবনার পাকশীতে বিপদসীমা ২২ দশমিক ৫০ মিটার এখানে সোমবার সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা পাওয়া ২০ দশমিক ৪৮ মিটার। বিপদসীমার দুই মিটার নিচ দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে। পদ্মার সরদহ পয়েন্টে বিপদসীমা ১৬ দশমিক ৯২ মিটার। সন্ধ্যায় সেখানে পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৫ দশমিক ৬ মিটার। তবে পদ্মার শাখা ও উপশাখা নদীগুলোতেও পানি বেড়েছে।

পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাংখা এলাকা দিয়ে ভারতের গঙ্গা নদী পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই পয়েন্টে সোমবার ভোর ৬টা ও সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ২০ দশমিক ৪৮ মিটার। বিকেল ৩টায় তা হয় ২০ দশমিক ৫০ মিটার। পাংশায় পদ্মার পানির বিপদসীমা ২২ দশমিক ৫ মিটার।
এদিকে, বন্যার শঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে চরাঞ্চলগুলোতে। চরের বাসিন্দা হুমায়ুন বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে আতঙ্ক বাড়ছে চরবাসীদের মধ্যে। তারা গবাদি পশুগুলো লোকালয়ে নিয়ে চলে এসেছে। আর দেড় থেকে দুই ফুট পানি পদ্মায় বৃদ্ধি পেলে পুরো চরখিদিপুর ডুবে যাবে। তাই আমাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

নদীর বাঁধের চর সাতবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা শারিউল ইসলাম বলেন, যদি ফারাক্কার সব গেট খুলে দেয় তাহলে আমাদের ক্ষতি হবে। ঘরবাড়ি সব ভেঙে যেতে পারে পানির কারণে। বর্র্ষা মৌসুুমে স্বাভাবিক সময়ে পদ্মার পানি বাঁধের ৫টা ব্লক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখনও ব্লক পর্যন্ত যায়নি পানি।

এই এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. রজব আলী বলেন, পানি বাড়ার খবরে তারা আতঙ্কিত। বন্যা হলে তাদের ঘরবাড়ির ক্ষতি হবে। তবে চর খিদিরপুরে এখনও পানি ঢোকে নি। তবে যে খবর শুনছি। তাতে রাতের মধ্যে লোকালয়ে চলে আসবে পানি।

এ বিষয়ে রাজশাহীর পবা উপজেলার ৮ নম্বর হরিয়ান ইউনিয়নের (চরখিদিপুর) সদস্য (মেম্বার) সহিদুল ইসলাম বলেন, মধ্যচর পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। খিদিরপুর চরে পানি ঢুকেছে। চরবাাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ লোকালয়ে চলে আসছে। অনেকেই আসতে পারছে না তাদের গবাদী পশুসহ সহ অন্য মালামালের জন্য।

Exit mobile version