বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
জুলাই আন্দোলনে আহতরা রাজধানীতে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করছেন। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা এই বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে তারা হাসপাতালের সামনের আগারগাঁও থেকে শ্যামলীমুখী সড়ক বন্ধ করে দেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা জানান, জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন আহতদের মধ্যে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি পঙ্গু (নিটোর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি আহতের চিকিৎসা ভাতাও দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে হাসপাতালে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার। তারা একটি ফ্লোরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে চলে যান। অন্যদের সঙ্গে কথা না বলায় বা খোঁজ না নেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হন। ক্ষোভ থেকে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
কয়েকজন বিক্ষোভকারী ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম নিটোর পরিদর্শনে আসেন। তারা চতুর্থ তলার পুরুষ ওয়ার্ডে এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়ে ঘুরে দেখে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু তিন তলার ওয়ার্ডে থাকা আহতদের দেখতে না যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। একপর্যায়ে তারা নিচে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি আটকে দেন। তাদের মধ্যে কেউ একজন গাড়ির সামনে বসে পড়েন। আরেকজন গাড়ির ছাদে উঠে পড়েন।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার অন্য একটি গাড়িতে বেরিয়ে যান। বিক্ষোভকারীরা এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি গাড়ি ও প্রটোকলে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি আটকে দেন। একপর্যায়ে তারা রাস্তায় নেমে আসেন।
জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী মো. হাসান বলেন, আমাদের এক-একটি ওয়ার্ডে ৪৮ জন করে মানুষ আছে। কিন্তু উনারা উনাদের পছন্দের বিদেশি পাঁচ সাংবাদিক নিয়ে এসেছেন এবং আমাদের দেশীয় কোনও সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারা দু-একজনের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছেন। আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। আমরা কথা বলতে গেলে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সামান্য ট্রিটমেন্ট (চিকিৎসা) দিয়ে তিন মাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার পায়ে ৯টি অপারেশন করা হয়েছে, তারপরও এখন পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি। আমরা চাই তারা সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলুক। আমাদের জন্য ঘোষণা করা সেই ১ লাখ টাকা এবং ভালোমানের চিকিৎসাসেবা দিক।
এ বিষয়ে ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ (এডিসি) মোহাম্মদ জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জুলাই ও ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে তারা হাসপাতালের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করছেন। আমরা আহত, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনা করছি। দ্রুতই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনারের গাড়িতে হামলার বিষয়ে এডিসি জিয়াউল হক বলেন, তারা আহত রোগী। তারা কীভাবে গাড়িতে হামলা বা ভাঙচুর করবে? মূলত ক্ষোভের জায়গা থেকে তারা গাড়ি আটকে দিয়েছে।
সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পরিদর্শন শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের অনুরোধে তাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার।
এ সময় ভিড়ের মধ্যে গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগ করে একদল মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও হাইকমিশনারসহ সবাই তাদের বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা কোনও কথা শোনেননি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াই চলে আসতে বাধ্য হন।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন