মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর প্রখ্যাত সংগীতসাধক উস্তাদ রবিউল হোসেন (জন্ম- ১৯৪৭, মৃত্যু- ২০১৩) ৭৭তম জন্মবার্ষিকী আজ।
তিনি ১৯৪৭ সালের ১৬ মে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপ ধামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ শেখ হারান উদ্দীন ছিলেন একজন সৌখিন সেতার বাদক। প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব মোজাম্মেল হোসেন রবিউল হোসেনের পিতা। পিতার কাছেই তাঁর সঙ্গীতে হাতেখড়ি।
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত পিতৃশিষ্য উস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুর কাছে তিনি সঙ্গীতে তালিম নেন। পিতা উস্তাদ মোজাম্মেল হোসেনের কাছে ১৩ বছর এবং পিতৃশিষ্য ও চাচা প্রয়াত তবলাসঙ্গতকার উস্তাদ ইয়াসীন আলীর কাছে রবিউল হোসেন দীর্ঘদিন যাবৎ সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। ১৯৭৬ সালে পিতার মৃত্যুর পর পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরীর কাছেও তিনি কিছুদিন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সাধক উস্তাদ এ.দাউদ এর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তালিম গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের এক উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিয়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ও ভয়েস ট্রেনার উস্তাদ সাগিরুদ্দিন খাঁ (সুর সাগর) এর নিকট থেকেও তিনি তালিম গ্রহণ করেন।
উস্তাদ রবিউল হোসেন শুধু শিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে শিল্পী, সংগঠক ও শিল্পী তৈরির কারিগর। শিল্পী হিসেবে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সঙ্গীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছেন। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি রাজশাহী বেতার কেন্দ্রের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস আয়োজিত ও ১৯৮০ সালে ঢাকায় তবলা শিক্ষালয় আয়োজিত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘শুদ্ধ সঙ্গীত প্রসার গোষ্ঠী’ আয়োজিত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে প্রতি বছর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। ১৯৮১-৮২ সালে বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা থেকে নিয়মিত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।
১৯৯৬ সালের মে মাসে সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের উদ্যোগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘ডেমোনেস্ট্রেশন ট্রেনিং ও সঙ্গীত সম্মেলন’ অনুষ্ঠানে সম্মানিত ‘সঙ্গীত বিশারদ’ হিসেবে উস্তাদ রবিউল হোসেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়া তিনি ঢাকা বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও ছায়ানটে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, দিনাজপুর, খুলনা, ফরিদপুর,বগুড়া, রংপুর ,টাঙ্গাইল, নাটোর, নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে এবং ২০১৩ সালে তিনি জার্মানি বিভিন্ন শহরে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রের একজন বিশেষ শ্রেণির উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করে গেছেন।