সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি রাজশাহীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতে পাঁচজন গুণিজনকে ঋত্বিক সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়েছে। পদকপ্রাপ্তরা হলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ও ঢাকার মোরশেদুল ইসলাম, চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের প্রেমেন্দ্র মজুমদার, চলচ্চিত্র গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য ঢাকার অনুপম হায়াৎ এবং মঞ্চ নাটক ও চলচ্চিত্রে আলোকসম্পাতে অনন্য অবদানের জন্য রাজশাহীর আবু তাহের।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরীর মিয়াপাড়াস্থ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত ‘৫ম ঋত্বিক সম্মাননা পদক ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাতি ডা. এফএমএ জাহিদ। প্রধান অতিথি ছিলেন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়ারুজ্জামান লিটন, রাজশাহীতে কর্মরত সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্রোপাধ্যায়, কবিকুঞ্জের সভাপতি বিশিষ্ট কবি ও শিক্ষাবিদ রুহুল আমিন প্রামাণিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল। স্বাগত বক্তব্য দেন, উৎসব পরিচালক ও রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি চলচ্চিত্রকার আহসান কবীর লিটন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘রাজশাহীতে এখন মোটামুটিভাবে একটা বিরাট সাংস্কৃতিক অঙ্গন হয়ে উঠেছে। রাজশাহীর কিছু প্রতিষ্ঠান অপ্রাতিষ্ঠানিক ভাবে যে কাজ-কর্ম করছে, তার ফলেই আজকে রাজশাহীর মানুষ অনেক বেশি প্রাণদীপ্ত হয়ে আছে।’
অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক আরো বলেন, ‘আমার ভালো লাগছে এ জন্যই যে, যাদেরকে প্রতিদিনই দেখি তারা তো এখানে আছেনই তাদের সঙ্গে আজ এখানে ভারতে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ও প্রেমেন্দ্র মজুমদার আছেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত সম্পর্কে আমার কিছু বলা মানায় না। যারা তার ‘নিম অন্নপূর্ণা’ দেখেছেন, তারা বুঝবেন তিনি অত্যান্ত প্রতিভাবান ও সম্পণর্œ ব্যাতিক্রমধর্মী। ‘নিম অন্নপূর্ণা’ এ নামটিও আমাদের মাথায় আসবে না। ‘নিম অন্নপূর্ণা’ একটি অসাধারণ গল্প। নিম অন্ন পূর্ণাকে এক সময় বলেছিল বাংলা সাহিত্যের সবচেয়েইতে প্রিয় ও সেরা গল্প।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে কবি ও শিক্ষাবিদ রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, ‘আমি আজকে প্রথমেই ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাধুবাদ জানাচ্ছি এ জন্য যে, ঋত্বিক ঘটকের ৯১তম জন্মবার্ষিকী তারা উৎযাপন করছেন এবং এই সুযোগে তারা যেসমস্ত সূর্যাজ্জ্বল মানুষকে সমবেত করেছেন আমদেরকে সমৃদ্ধ ও আলোকিত করেছেন’।
শিক্ষাবিদ রুহুল আমিন প্রামাণিক আরো বলেন, ‘আজকে আমাদের রাজশাহীতে আমরা যারা সাংস্কৃতিক কর্মী আছি তাদের দীপ্তের অভাব আছে, কিন্তু মনে হয় চিত্তের অভাব নাই। চিত্তটা আমাদের অনেক বড়। আমরা রাজশাহীতে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল করার কথা ভাবছি, আমরা ফিল্ম ইন্সটিটিউট গড়ে তুলতে চাচ্ছি, আমরা ঋত্বিক ঘটকের মত বাংলা শুধু নই, তিনি এ পৃথিবীর চলচ্চিত্রে একজন প্রবাদ পুরুষ। যিনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারতেন। এতে প্রতিভাধর মানুষ ছিলেন তিনি যে অঘটন ঘটন প্রতিয় সে’।
রাজশাহীতে কর্মরত সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্রোপাধ্যায় বলেন, ‘ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে আমার পরিচয় কিছুটা বড় হয়ে। কেননা ঋত্বিক ঘটকের ছবি বা তার সমন্ধে বোঝার মত ক্ষমতা একটু বড় না হয়ে বোধায় হয়না। ঋত্বিক ঘটক সমন্ধে একটি মিথ যেটা প্রচলিত আছে যেমন তার আসল নাম কি ছিল বা তার পদবী না উপাধী ঘটক, তার আগে কি ছিলেন, বাগচী ছিলেন। কিছু কিছু মিথ এরকম চরিত্রের জন্য বোধহয় থাকায় ভালো। কেনানা ঋত্বিক ঘটককে আমাদের তো ঠিক রক্তে মাংশে গড়া একটি মানুষ বলেই তো মনেই হয়না।’
সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্রোপাধ্যায় আরো বলেন, ‘তাকে নিয়ে কাজ করার এখনো বহু যায়গা রয়েছে। আমি কিছুদিন আগে খবরের কাগজে পড়েছি আমি সরকারি সূত্রে এখনো জানতে পারি নি। যে, ভারত সরকার নাকি ঋত্বিক ঘটকের কিছু অপ্রকাশিত কিছু ছোট ছোট ছবির টুকরো যেগুলো বোধহয় পুনা ফিল্ম ইন্সটিটিউটে আছে সেগুলোকে ডিজিটালাইজ করার একটি প্রয়াস করছেন। এটি একটি অত্যান্ত ভালো খবর।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, ‘আমাদের রাজশাহীর এ চলচ্চিত্র চর্চার একটি ছোট ইতিহাস ইতিমধ্যেই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমার খুব আনন্দ লাগছে যে আমি সেই চর্চায় কিছুটা অংশিদারও বটে। আমরা রাজশাহীতে যে চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করছি যারা তার মধ্যে আমি একটি ফিল্ম সোসাইটি গঠন করেছিলাম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল আরো বলেন, ‘আজকে রাজশাহীতে চলচ্চিত্র নিয়ে এই যে একটি জোয়ার উঠেছে। আমি এটাকে জোয়ার-ই বলবো। এই জোয়ারে আমরা ৪টা চলচ্চিত্র সংসদ একযোগেই কাজ করে আসছি দীর্ঘদিন ধরেই। আমরা নানা সময় দেখেছি যে এক সঙ্গে কাজ করতে গেলে নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হয়। আমরা খুব সচেতন আছি এ জন্যই যেন আমাদের মধ্যে কোন ধরণের সমস্যার সৃষ্টি না হয়।যদি কখনো কোন ধরনের ছোটখাটো ভুল ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েও যায় আমরা সেটা মিটিয়ে ফেলি। আর আমরা একে অপরের সহায়তা করি।’
রাজশাহীতে রাজশাহী ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ফিল্ম ইন্সটিটিউট ও উত্তরবঙ্গে ফিল্ম ফেডারেশন এবং ঋত্বিক ঘটকের বাড়িতে কালচারাল কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রকিবুল হাসান রবিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা স্বরণ স্মরণসঙ্গীত পরিবেশন ও প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।
প্রসঙ্গত, পাঁচদিনব্যাপী এ চলচ্চিত্র উৎসবে আজ থেকে নগরীর পদ্মা নদীর ধারের লালন মঞ্চ ও বড়কুঠির মুক্তমঞ্চে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা নেপালের মোট ৩০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।