বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
মাহাবুল ইসলাম:‘প্রশ্নটা শৃঙ্খলার। পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনো রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে ইফতারি করতে হয়। আবার কখনো সুযোগ বুঝে একপলকেই খেজুর মুখে দিয়ে রাস্তায় নামতে হয়। আবার কখনো ইফতারির জন্য ৫-১০ মিনিট সময়ও পাওয়া যায়’- এভাবেই নিজের ইফতারির সময়টা কিভাবে পার করেন তা বলছিলেন নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জয়নাল আবেদীন। তার বয়স এখন ৫৪ বছর। এই বয়সেও চাকরির এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে চোখে মুখে কোনো বিরক্তি নেই, নেই ক্লান্তিও।
রাজশাহী সবুজ ও শৃঙ্খলার নগরী হিসেবে পরিচিতি পেলেও পরিবহণের বিশৃঙ্খলতা বাড়ছেই। আর পরিবহণের বিশৃঙ্খলতার সঙ্গে সঙ্গে নগর সড়কেও বাড়ছে যানবাহণের চাপ। দেখা দিচ্ছে যানজট। রাজধানী ঢাকার মতো পরিস্থিতি ওতোটা নাজুক না হলেও নগরীর বেশকিছু পয়েন্টে যানজট লেগেই থাকে। আর আসন্ন ইদুল ফিতরকে সামনে রেখে যানজটের পরিমাণ আরও বেড়েছে নগরীতে। আর যানজটের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। যা কখনো কখনো পুলিশ সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিকেও বাড়িয়ে তুলছে বহুগুণে।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, মানসিক শক্তিটাই আসল শক্তি। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে আমি রাজশাহী মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগে কাজ করছি। এরআগে ৭ বছর আরএমপির বিভিন্ন থানায় কাজ করেছি। রাস্তায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেও নিজেকে তেমন ক্লান্ত মনে হয় নি। কারণ দায়িত্ববোধটা আগে। আর মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোলাগে।
রাজশাহী নগরীর যানজটপূর্ণ পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে নগরীর লক্ষ্মীপুর, সাহেববাজার, জিরোপয়েন্ট, রেলগেট, স্টেশন ও তালাইমারি। আর এখানে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক পুলিশকে বেশ চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেখানে কখনো কখনো দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠতেও দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর নগরীর জিরো পয়েন্ট, লক্ষ্মীপুর ও রেলগেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য সময়ের চেয়ে গাড়ির চাপ বেড়েছে। আর এই পয়েন্টে গাড়ির শৃঙ্খলা ফেরাতে একজন সার্জেন্টসহ ৩ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে ডিউটি করতে দেখা যায়। যেখানে শুধু দাঁড়িয়ে থাকায় নয়; চালকদের সিগন্যাল দেয়ার পাশাপাশি উচ্চ শব্দে কথাও বলতে হচ্ছে। সিগন্যালে পড়ে কোন কোন গাড়ি চালক উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজিয়েই চলেছেন। কেউ জড়াচ্ছেন তর্কে। কেউ আবার মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে অন্য গাড়ির চালকের সঙ্গে ঝামেলাতেও জড়াচ্ছেন। আর এসব দ্বন্দ্বও মেটাতে হচ্ছে পুলিশের এসব সদস্যদের।
রেলগেটে দায়িত্বপালন অবস্থায় কথা হয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কামারুজ্জামান মিয়ার (৪০) সঙ্গে। তিনি বলেন, দুপুর ২ টায় এসেছি, ডিউটি শেষ হবে রাত ১০ টায়। এরমধ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী আচরণ করতে হবে। রাস্তায় জটলা যেন না বাঁধে সে লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। আর এখন রমজান মাস হলেও কথা বলা থামে না। এ মাসে একটু কষ্ট হলেও দায়িত্ব পালনে ফাঁকি দিলেই যানজট বেঁধে যাবে।
এ কারণে কখনো কখনো খেজুর মুখে দেয়ারও সময় থাকে না। তবে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ দিন ইফতারির সময়টা গাড়ির চাপ কিছুটা কম ছিলো। তবে ইদ যত ঘনিয়ে আসবে, তত চ্যালেঞ্জ বাড়বে।
লক্ষ্মীপুর এলাকায় দায়িত্ব পালন অবস্থায় কথা হয় ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহমুদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, রমজানের প্রতিদিন না হলেও মাঝেমধ্যেই রাস্তায় ইফতারি করতে হয়। গত রোববারও আজান দেয়ার কিছু পরে ইফতারি করেছি। গাড়ির চাপ থাকলে রাস্তা থেকে নামার সুযোগ থাকে না। আর আমাদের বিশ্রামের অফিসিয়াল কোনো অর্ডার নেই। সুতরাং ডিউটি পালন করতেই হয়।