বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ এখন যেন সোনার হরিণ। কাউন্টার, অনলাইন বা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেক সময় মিললে না কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের টিকিট। স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরুর আধা ঘণ্টায় টিকিট শেষ হওয়ার নজির নতুন কিছু নয়। স্টেশনের কাউন্টারে নেই, অনলাইনে নেই। তবে আছে কালোবাজারে। তাহলে কালোবাজারে টিকিট আসে কোথা থেকে? এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে রেলওয়ে পুলিশ বলছে, টিকিট কালোবাজারে জড়িতের তালিকা ও নজরদারিতায় রাখা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের অভিযান চালানো হচ্ছে। রেলওয়ের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে (জিআরপি) থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে টিকিট কালোবাজারি সংক্রান্ত ৭টি মামলা হয়েছে। এ সময় তাদের থেকে প্রায় ১০০ টিকিট উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব মামলায় আসামি ৭ জন। এর মধ্যে বছরটির জুলাই মাসে চারজনকে চার মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে এক মামলায় একজন টিকিট কালোবাজারিকে চালান দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ বলছে, এই পাঁচজন কালোবাজারির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তদন্তে টিকিট কালোবাজারের সঙ্গে জড়িতের তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দুইজনকে টিকিট কালোবাজারির দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতের আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাদের জেলহাজতে পাঠায়। আর ২০২৩ সালের গত ৩ জানুয়ারি রেলস্টেশনে প্ল্যাটফর্মে টিকিট কালোবাজারির সময় শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় শফিকুলের থেকে পাঁচটি টিকিট উদ্ধার করা হয়। এই পাঁচটি টিকেটে আটটি আসন রয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বেশিরভাগ টিকিট কেনা-বেচা হয় বেশি দামে। টিকিট প্রতি ১৫০ থেকে ২৫০টা পর্যন্ত বেশি নেয় কালোবাজারিরা। বেশির ভাগ সময় টিকিট বিক্রির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়েছে কালোবাজারিরা। তাদের থেকে ট্রেনের ২৫ থেকে ৩০টা পর্যন্ত টিকিট উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, টিকিটগুলো অনলাইন থেকে কেনা। অনলাইন হোক আর স্টেশনের কাউন্টার হোক; একজন নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চারটির বেশি টিকিট কিনতে পারবেন না। এখন প্রশ্ন হলো ২৫ থেকে ৩০টি টিকিট একজন কালোবাজারি কীভাবে কেনে?
টিকিট কালোবাজারের সঙ্গে জড়িতরা গ্রেপ্তার হওয়ার পরে জেল থেকে বের হয়ে একই কাজ করে। এমন তথ্য মিলেছে গত ২৬ ডিসেম্বর। এদিন সন্ধ্যায় টিকিট বিক্রির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন হাবিবুর রহমান হাবিব। হাবিবের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে বোয়ালিয়া থানায় টিকিট কালোবাজারির মামলা রয়েছে। সেই মামলায় জামিনে এসে হাবিব আবার টিকিট কালোবাজারের সঙ্গে জড়িয়ে পরেন।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) উজ্জ্বল আলী জানান, হাবিবুর রহমান চিহ্নিত টিকিট কালোবাজারি। তাকে দীর্ঘদিন থেকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যায় তাকে রেলওয়ের ওভারব্রিজের কাছে জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির কাছে টিকিট বিক্রির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ধূমকেতু ও পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৬টি টিকিট উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হাবিবুর ও জসিম উদ্দিন পুলিশকে জানান, টিকিটের মূল্য ৩৪০ টাকা। কিন্তু কালোবাজারি হাবিবুর ক্রেতা জসিমের কাছ থেকে একটি টিকিটের দাম নিচ্ছেন ৬৫০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিকিট কালোবাজারি হাবিবের থেকে বেশি দামে টিকিট নেওয়া এক ক্রেতা জানান, ‘তিনি রাজশাহী টু ঢাকার টিকিট হাবিবের থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দিয়ে কিনেছেন। হাবিবের কাছে টিকিট প্রায় সময় পাওয়া যেত। তবে দাম বেশি নিত।’
রাজশাহী রেলওয়ে জিআরপি থানার ওসি গোপাল কর্মকার জানান, গত এক বছরে সাতজনকে টিকিট কালোবাজারে বিক্রির সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের থেকে ১০০টি টিকিট উদ্ধার করা হয়। জুলাই ও সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আমরা তালিকা করছি, কালোবাজারির গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চিফ কমান্ডেন্ট মো. আশাবুল ইসলাম বলেন, আমরা সব সময় সজাগ রয়েছি। আরএনবি এবং জিআরপি থানা পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে অনেক টিকিট কালোবাজারিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের গ্রেপ্তারের পরে জিআরপি থানায় হস্তান্তর করে জিআরপি থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়।