নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও সংশোধনে ঘুষ লেনদেনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দেশের ১৩ জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে রাজশাহী বিভাগের চার জেলায় দুদক হানা দিয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) দুদকের জেলা কার্যালয় থেকে একযোগে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক নির্বাচন অফিসে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম হাতেনাতে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, সোমবার সারা দেশের ১৩ নির্বাচন অফিসে একযোগে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযান শেষে বিস্তারিত বলা হবে। যেসব অফিসে দুদকের অভিযান– দুদকের বিভিন্ন জেলা কার্যালয় থেকে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলা নির্বাচন অফিস।
অভিযোগ মূলত জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও সংশোধনসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে ঘুষ ও হয়রানি। অভিযোগ রয়েছে দালালের মাধ্যমে লেনদেনের।
এর আগে গত ৭ মে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে দালালদের মাধ্যমে ঘুষ লেনদনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ঢাকাসহ ৩৫ বিআরটিএ অফিস, গত ২৯ এপ্রিল বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রধান কার্যালয়সহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ৩৬ অফিসে এবং গত ১৬ এপ্রিল দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি ও নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দেশের ৩৫ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি সেবা নিয়ে একযোগে ১৩ নির্বাচন অফিসে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
রাজশাহী নির্বাচন অফিসে দুদকের অভিযান, ঘুষ-হয়রানির অভিযোগ
সেবা পেতে হয়রানি ও বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে দুদকের একটি দল কার্যালয়টির বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এই অভিযান পরিচালনা করে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিদ্দীক ও দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান।
আমির হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, গত ২২ জুন একজন ভুক্তভোগী দুদক কমিশনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচন অফিসে বিভিন্ন সেবা পেতে গেলে সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হতে হয় এবং নির্ধারিত ফি’র বাইরে বাড়তি টাকা না দিলে কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয় না। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশন একটি এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করে এবং এই অভিযান চালানো হয়।
অভিযানকালে দুদক কর্মকর্তারা কার্যালয়ের বোয়ালিয়া থানা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তর, জেলা নির্বাচন অফিস ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরে যান। তাঁরা আবেদন গ্রহণ ও নিষ্পত্তির রেজিস্টারসহ বিভিন্ন নথি যাচাই করেন এবং সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গেও কথা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরের বোয়ালিয়া থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মশিউর রহমান হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের অফিসে সেবা নিতে কোনো হয়রানি হয় না, টাকাও নেওয়া হয় না। তবে পাসপোর্ট করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের জন্য এখানে পাঠানো হয়। তখন ট্রেজারির বাইরে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা কর্মীরা হয়তো দু-এক শ টাকা নেয়। পাসপোর্ট অফিস নিজেই তো জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করতে পারে, কেন যে আমাদের কাছে পাঠায়, বুঝি না।’
তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তারা যখন এসেছিলেন, আমি একটি মিটিংয়ে ছিলাম। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারব না।’
অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, তাঁরা সরেজমিনে পাওয়া তথ্য ও সংগৃহীত নথি পর্যালোচনা করবেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুদক কমিশনে পাঠানো হবে।
নওগাঁয় ছদ্মবেশে নির্বাচন কার্যালয়ে দুদক, টাকা লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধ, সংগ্রহ, এলাকা স্থানান্তর, আর্থিক লেনদেন ও সেবা প্রত্যাশিদের হয়রানি অভিযোগে নওগাঁয় জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সারা দেশের মতো সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে নওগাঁ জেলা নির্বাচন অফিসে দুদকের একটি দল অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানে তারা টাকা নগদ টাকা লেনদেনের প্রমাণ পায়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় নওগাঁর উপ-সহকারী পরিচালক মেহবুবা খাতুন রিতা জানান, সেবা প্রত্যাশিদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে প্রথমে ছদ্মবেশে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে প্রবেশ করা হয়। এসময় প্রত্যেক সেবা প্রত্যাশিদের কাছ থেকে টাকা নিতে দেখা যায়। এই অফিসে নগদ টাকা লেনদেনের সুযোগ নেই। কিন্তু তারা নগদ টাকা লেনদেন ও প্রত্যেক সেবা প্রত্যাশিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ হিসেবে ১০০টাকা নিচ্ছে।
মেহবুবা খাতুন রিতা বলেন, পরবর্তীতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ডেকে এনে সরেজমিনে এমন কর্মকান্ড দেখানো হয়। পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে কমিশনের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
টাকা লেনদেনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি অস্বীকার করে জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আব্দুল মোত্তালিব বলেন, নির্বাচন অফিসে সরাসরি নগদ টাকা লেনদেনের কোন সুযোগ নেই। এনআইডির ক্ষেত্রে যে ফি নির্ধারণ করা আছে, অনলাইন ব্যাংকি বা চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে অফিসে আসতে হয়।
পাবনা জেলা নির্বাচন অফিসে দুদকের অভিযান
পাবনা প্রতিনিধি জানান, অনলাইনে সেবা গ্রহনে বিড়ম্বনার অভিযোগে পাবনার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের একটি দল।
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে দুদক সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সুত্রধরের নেতৃত্বে দুদকের একটি অভিযানিক দল জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযান চালায়।
একজন সেবা গ্রহীতার অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অনলাইনে নাম বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে কিছু হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়।
দুদক সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সুত্রধর জানান, অভিযানে বিভিন্ন সেবা গ্রহীতাকে জিজ্ঞসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞসাবাদে অধিকাংশ সেবা গ্রহীতাকে সন্তোষজনক সেবা পেয়েছে বলে জানান। তবে কয়েকজন সেবা গ্রহীতা সাঠিকভাবে সেবা পায়নি বলে অভিযাগ করেন। এ বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সাথে কথা বলে পরবর্তি সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।#