একাত্তরের বন্ধু ভারত ও রুশ যোদ্ধাদের সংবর্ধনা

আপডেট: ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


একাত্তরের বন্ধু ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নৌবাহিনীর সদস্যদের সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২৯জন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী চট্টগ্রাম বন্দরের ‘মাইন সুইপিংয়ে’ অংশ নেওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঁচজন সদস্যকে সংবর্ধনা দেন।
ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও রাশিয়ার অবদান ছিল। আপনাদের সাথে নিয়ে আমরা আমাদের বিজয় দিবস পালন করছি, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।”
ভারতের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জি এস সিহতার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় প্রতিনিধি দল এবং ভিক্তর কঝরিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার যে পাঁচজন নৌ সেনা গণভবনের ব্যাঙ্কোয়েট হলে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন, তাদের সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। জি এস সিহতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরবর্তী ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সিহতা বলেন, “বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখেছিলাম, সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংকার।”
তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে।”
বাংলাদেশের বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকীতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ভিক্তর কঝরিন।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের মাইন অপসারণের পুরো সময়টাই বাংলাদেশে ছিলেন এই রুশ সেনা। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে রুশ ভাষায় একটি বই লিখেছেন তিনি।
বইটি শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন ভিক্তর কঝরিন। এই বই বাংলা ভাষায়ও প্রকাশ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। রাশিয়ার সাবেক এই সেনা সদস্য বলেন, “আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্ব ১৯৭২ সাল থেকে।”
অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল ভি এস টঙ্ক একাত্তরে সিলেট এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা স্মরণ করেন।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠন এবং এর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় বিশেষ ভূমিকা পালনকারী ভারতের সাবেক এয়ার কমান্ড্যান্ট চন্দ্র মোহন সিংলা বলেন, “আমার মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে।”
১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আসামের দিমাপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী যাত্রা শুরু করে।
দুটি ডিসি-৩ ডাকোটা এবং একটি অ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার নিয়ে যুদ্ধে নামেন বিমান বাহিনীর সদস্যরা।
আগরতলা সীমান্ত থেকে সিলেট পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অভিযানের কথাও স্মরণ করেন চন্দ্র মোহন সিংলা।

ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক ভাইস অ্যাডমিরাল রমন প্রেম সুথান এবং সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার ভানট মদন মোহন প্রতিক্রিয়া জানান।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নয় মাস বন্দিদশার কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “আমার মা, বোন এবং ভাইসহ আমাকে আটকে রাখা হয়। আমাদের ধানমন্ডিতে দুই ঘরের একটি বাড়িতে রাখা হয়েছিল।
“সকলে ১৬ ডিসেম্বর সকালে বিজয় দিবস পালন করলেও আমরা মুক্ত হয়েছি পরের দিন, ১৭ ডিসেম্বর। আমাদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা মুক্তি দিতে রাজি হয়নি। পরে ভারতের সেনাবাহিনীর মেজর অশোক ওই পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাদের বাড়ির বাইরে বেরোতে দিত না। কিন্তু, ভারতের সেনাবাহিনী যখন এয়ার রেইড চালাতো তখন তারা বাংকারে চলে যেতে, আর আমরা ঘরের বাইরে বের হতাম।
“আমরা বিজয়ের অপেক্ষায় ছিলাম।” শেখ হাসিনা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণও হত ভারতে।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- পরবর্তী সময়ে ইতিহাস বিকৃতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “নতুন প্রজন্ম আমাদের বিজয়ের ইতিহাস জানতে চায়।”
অনুষ্ঠানে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে যখন বাংলাদেশের বিজয় অবশ্যাম্ভাবী তখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব তুললে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাতে ভেটো দেয়।
ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “প্রয়োজনে আপনাদের যে সহযোগিতা আমরা পেয়েছি, তা ভোলার নয়।” মুক্তিযুদ্ধে দুই নম্বর সেক্টরের কমান্ডার খালেদ মোশাররফের মেয়ে মাহজাবিন খালিদও বক্তব্য রাখেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে ‘ইতিহাস বিকৃতির’ কথা তুলে ধরেন তিনি।- বিডিনিউজ