সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
বাংলাদেশ ও ভারতের কাছ থেকে বকেয়া বাবদ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা দাবি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। দুই দেশের কাছ থেকে সম্পদ ও অন্যান্য বকেয়া খাতে কী পাওনা আছে তা জানতে চেয়ে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান দেশের সব বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের কাছ থেকে পাকিস্তানের চূড়ান্ত পাওনা নির্ধারণ করা। পাকিস্তানের দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকার খবরে বলা হয়, স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানকে ১ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা দিতে হবে ভারত ও বাংলাদেশকে। ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত পাকিস্তানের ৬০০ কোটি টাকার সম্পদ ভারত এবং ৯২১ কোটি টাকার সম্পদ বাংলাদেশ দখল করে রেখেছে। সম্প্রতি ভারত এবং বাংলাদেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে জমি, ভবন, সরকারি সিকিউরিটি, ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ প্রভৃতি বাবদ পাকিস্তানের কী পরিমাণ পাওনা রয়েছে তার বিস্তারিত হিসাব দেয়ার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানদের সার্কুলার জারি করেছে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান। এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকার খবর বলছে, স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশভাগের সময় স্বর্ণের রিজার্ভ, স্টার্লিং সিকিউরিটি, ইন্ডিয়ান সিকিউরিটি, কয়েন, ভারতীয় মুদ্রায় ভাগ বাবদ পাকিস্তানের পাওনা রয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। পাকিস্তান মুদ্রা ছাপানোর জন্য ভারতকে চার কোটি টাকা দিয়েছিল। কিন্তু গত সাত দশকেও ভারত এই মুদ্রা পাকিস্তানকে সরবরাহ করেনি, মুদ্রা ছাপানোর জন্য দেয়া অর্থও ফেরত দেয়নি।
বাংলাদেশের অভিযোগ, একাত্তরের আগে বাংলাদেশের প্রাপ্য প্রায় ৩৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার (৪.৩২ বিলিয়ন ডলার) সম্পদ বণ্টনের সুরাহা না করে উলটো বাংলাদেশের কাছে এখন প্রায় ৭০০ কোটি টাকা (৯২১ কোটি পাকিস্তানি রুপি) পাওনা দাবি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রায় ৩৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সম্পদ বণ্টনের বিষয়টির এত দিনেও সুরাহা হয়নি। এ ছাড়া ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সাহায্য হিসাবে বিভিন্ন দেশের পাঠানো ২০ কোটি ডলার পাকিস্তান নিয়ে গিয়েছিল। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকা শাখায় জমা হওয়া ওই ত্রাণের টাকা মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় ব্যাংকের লাহোর শাখায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ওই অর্থ চাইলেও তা ফেরত দিচ্ছে না পাকিস্তান।
এর আগেও বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান সরকারের প্ল্যানিং কমিশন ১৯৭৪ সালে ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে পাকিস্তানের কাছে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের সম্পত্তি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সম্পদের পরিমাণ হিসাব করে টাকাটা চাওয়া হয়। বর্তমান বিশ্ববাজারে যার মূল্য আরও অনেক বেশি। এত দিনে পাকিস্তান বাংলাদেশকে দিয়েছে একটি মাত্র পুরানো বোয়িং বিমান। যার আয়ু ছিল সীমাবদ্ধ। পাওনা নিয়ে কথা বলতে গেলেই কানে তুলো গুঁজছে পাকিস্তান। আবার পাওনার কথা অস্বীকারও করছে না। বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ৬৯২ কোটি টাকা দাবি সম্পূর্ণ ‘অবাস্তব-ভিত্তিহীন’ বরং বাংলাদেশ যে পাকিস্তানের কাছে টাকা পায় তা ফেরত না দিতেই এমন উলটো দাবি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।- বর্তমান