নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে এখনও ঠিকমত বই আসেনি। কোনো ক্লাসে তিনটি, কোনো ক্লাসে চারটা। আবার কোনো কোনো ক্লাসের একটিও বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। পাওয়া বইগুলোর তিন-চারটি ক্লাস শেষে খেলাধূলায় সময় কাটছে শিক্ষার্থীদের। তবে শিক্ষকরা বলছেন-পুরোনো বই বা পিডিএফ বই ডাউনলোড করে তারা ক্লাস নিচ্ছেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতি সন্তোষজনক বলছেন শিক্ষকরা।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ১০ টার দিকে রাজশাহী নগরীর হাউজিং এস্টেট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্যাটালাইট টাউন হাই স্কুল, নামো ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ, সপ্তম, ও অষ্টম শ্রেণির কয়েকটি করে বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে এখনও আসেনি নবম শ্রেণির। দশম শ্রেণির কয়েকটা বই এসেছে। অপরদিকে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পেয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পাইনি।
কয়েক শিক্ষার্থী জানায়, তারা এখনও সব বই পায়নি। যে বইগুলো তারা পেয়েছে; সেগুলোর ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। তারা ক্লাসে পড়াশোনা করছে। অনেক সময় স্যাররা (শিক্ষক) প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস করাচ্ছেন। এছাড়া পুরানো বইয়ের সঙ্গে এবছর বইয়ে যে গল্পগুলো মিল রয়েছে সেগুলো স্যাররা পড়াচ্ছেন। ক্লাস না থাকলে তারা স্কুল মাঠে খেলাধূলা করে বলে জানায়।
এ বিষয়ে হাউজিং এস্টেট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম আযম বলেন, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনটা করে বই এসেছে। সেগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নবম শ্রেণির একটিও বই আসেনি। তবে দশম শ্রেণির চারটি করে বই শিক্ষার্থীরা পেয়েছে। প্রতিদিন তিন থেকে চারটি করে ক্লাস করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ভালো। পিডিএফ বই ডাউনলোড করে আমরা দেখেছি। বিগত বছরের বইয়ের সঙ্গে কিছু কিছু মিল রয়েছে। আমাদের শিক্ষকরা তাদের সেগুলো পড়াচ্ছে। এছাড়া বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসের পরে খেলাধূলা করছে।
এছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, শিক্ষার্থীরা এখনও বই পাইনি। সেই কারণে অনেকের মন খারাপ। তবে তারা স্কুলে আসছে। ক্লাস হচ্ছে তিন থেকে চারটি করে। তারা বাড়িতে বলে, প্রজেক্টরের মাধ্যমে স্যারেরা ক্লাস করায়। অনেক সময় স্যারদের পড়ানোগুলো খাতায় তুলে নিয়ে বাড়িতে এসে তারা পড়াশোনা করে।
স্যাটালাইট টাউন টাউন হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক সাদিকুল রহমান বলন, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম শ্রেণির তিনটা করে বই এসেছে। এছাড়া দশম শ্রেণির পাঁচটা করে বই পাওয়া গেছে। সব ক্লাসে উপস্থিতি ভালো। দশম শ্রেণিতে উপস্থিতি কম ছিল বই না পাওয়ার করণে। শিক্ষার্থীরা সোমবার বই পেয়েছে। এখন উপস্থিতি বাড়বে। শিক্ষকরা সব ক্লাসের পিডিএফ বই ডাউনলোড করে পড়াচ্ছেন।
ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আওয়াল হোসেন বলেন, প্রথম, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব পেয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কিছু কিছু বই পেয়েছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পাইনি। তাদের পুরানো বই দিয়ে ক্লাস করা হচ্ছে। পিডিএফ বই ডাউনলোড করে শিক্ষকরা ব্লাক বোর্ডে লিখে দিচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা সেগুলো খাতাই তুলে নিয়ে বাড়িতে পড়াশোনা করে আসছে।
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কোন মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি তথ্য কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে ওয়েবসাইটে ঢোকা সম্ভব হয়নি। তাই এবিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল ওয়াহাব বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির তিনটা, সপ্তম শ্রেণির দুইটা ও অষ্টম শ্রেণির তিনটা বই পাওয়া গেছে। এখনও নবম ও দশম শ্রেণির বই আসেনি। স্কুলগুলোতে পিডিএফ বই ডাউনলোড করে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছে। এছাড়া কয়েক বছর পুরানো বইয়ের সঙ্গে কিছু কিছু মিল রয়েছে। সেগুলো শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।