এমপি আয়েন: জনউন্নয়নে ৫ শতাংশ কাজ করেছেন, ব্যক্তি উন্নতি প্রায় ৩৯ শতাংশ

আপডেট: ডিসেম্বর ৭, ২০২৩, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। এবার নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে রাজশাহী-৩ আসনে (পবা-মোহনপুর) স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন টানা দু’বারের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। এরমধ্যে মনোনয়ন না পেয়ে সমর্থকদের সামনে কান্নাকাটি করে আলোচনাতেও এসেছেন। আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীকে বহিরাগত আখ্যা দিয়ে তাকে ঠেকাতে অপতৎপরতারও চলাচ্ছে আয়েন এমন অভিযোগও রয়েছে।

তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের কল্যাণে যিনি কাজ করবেন তাকেই ভোট দেয়ার কথা বলছেন সাধারণ ভোটাররা। প্রার্থীদের আমলানামা নিয়েও আলোচনা চলছে ভোটারদের মাঝে। প্রশ্ন উঠেছে গত ৫ বছরে এমপি আয়েন জনগণের জন্য কতটুকু কাজ করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরও নিজের হলফনামায় দিয়েছেন এমপি আয়েন উদ্দিন।

হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জনউন্নয়নে গত ৫ বছরে মাত্র ৫ শতাংশ কাজ করেছেন। আর এ সময়ের মধ্যে তার সম্পদের উন্নতি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশের বেশি।
এমপি আয়েন ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৪ টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এগুলো হলো- সমাজসেবা, সংসদীয় আসনের উন্নয়ন ও গৃহ নির্মাণ, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মানব উন্নয়ন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন। তিনি ২০২৩ সালে হলফনামায় ৮৫ শতাংশ দারিদ্র বিমোচন ও ৭৫ শতাংশ রাস্তা পাকাকরণের তথ্য দিয়েছেন। যা ২০১৮ সালে ছিলো দারিদ্র বিমোচন ৮০ শতাংশ এবং রাস্তা পাকাকরণ ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ একটিতে ৫ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ৫ বছরে তিনি মাত্র ২ টি কলেজ, ২ টি হাইস্কুল সরকারিকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কথা বললেও তার নির্দিষ্ট কোন তথ্য দেন নি।

অপরদিকে, তার ব্যক্তি উন্নয়নের পাল্লা অনেক ভারি। গত পাঁচ বছরে এলাকায় তিনি ৭৫ বিঘা জমি কিনেছেন। অথচ ২০১৮ সালে আয়েন উদ্দিনের নামে মাত্র চার লাখ টাকার দুই বিঘা জমি ছিল। এখন তার নামে জমির পরিমাণ ৭৭ বিঘা। এসব জমির দাম তিন কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার ৩২৬ টাকা দেখানো হয়েছে। যদিও জমির প্রকৃত মূল্যে আরও বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এবার তিনি ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮০ টাকায় রাজধানীর পূর্বাচলে তিন কাঠার একটি প্লটও কিনেছেন। এছাড়া ২০২৩ সালে তিনি কৃষিখাতে ১১ লাখ, পেশা খাতে ৬ লাখ ৬০ হাজার, অন্যান্য ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৩, নগদ ৩ লাখ, যানবাহন ৫০ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৫, স্বর্ণ ২ লাখ, ইলেকট্রিক সামগ্রি ৬ লাখ ও আসবাবপত্র ৬ লাখ টাকার সম্পদ উল্লেখ করেছেন।

যা ২০১৮ সালে ছিলো কৃষিখাতে ১১ লাখ ৭০ হাজার, মৎস্য ২০ লাখ, শেয়ার ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০৬, পেশাগত আয় ৬ লাখ ৬০ হাজার, নগদ ৩ লাখ, ব্যাংক ৪৩ লাখ ৮২ হাজার ৯২২, সঞ্চয় ১৫ লাখ, বিমা ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০, যানবাহন ৫০ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৫, স্বর্ণ ২ লাখ, ইলেকট্রিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র ১২ লাখ, জমি ৪ লাখ এবং অন্যান্য আয় ছিলো ৬ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা সভাপতি সফিউদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রার্থীরা হলফনামায় যে তথ্য দেন তা কতটুকু বাস্তবসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য এটা বড় প্রশ্ন। এর বাইরে সংসদ সদস্যরা জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় যান, তার কতটুকু বাস্তবায়ন করেন? কেন করতে পারেন না? এগুলো আলোচনায় আসা দরকার। আর এখন মানুষের মাঝে বৈধ-অবৈধ যে কোনো উপায়ে সম্পদ অর্জনের মানসিকতা তৈরি হয়েছে। একশ্রেণির মানুষের সম্পদ রকেটের গতিতে বাড়ছে। এই বৃদ্ধি আদৌ বৈধ উপায়ে কি না? তা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে দেখতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ