নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকাধীন থিম ওমর প্লাজার ম্যানহোলে এক আওয়ামী লীগ কর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, নিহত ব্যক্তি কয়েকদিন আগে মারা যেতে পারে। তার শরীরে পঁচন ধরে চামড়াও উঠে গেছে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মর্গে পাঠানো হয়। এর আগে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা আলামত সংগ্রহ করেন।
ওই ব্যক্তির নাম নয়নাল উদ্দিন (৬২)। রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার শ্যামপুর থান্দারপাড়া মহল্লায় তার বাড়ি। তার বাবার নাম আবদুল জাব্বার। তার মানিব্যাগে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি পাওয়ায় পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তার হাতে ঘড়ি ছিল, প্যান্ট-শার্ট পরা ছিল। মানিব্যাগের ভেতর বেশ কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে।
নয়নাল উদ্দিনের বোন কুলসুম বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেছেন। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রামেক-এর মর্গে গিয়ে স্বজনেরা তার লাশ শনাক্ত করেন। স্বজনেরা বলেন, নয়নাল ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত ছিলেন। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থও ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী। দিনের বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়সহ দলের নেতাদের সঙ্গেই থাকতেন। রাতে বাড়িতে ফিরতেন। গত কয়েকদিন থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
আওয়ামী লীগের এই কর্মীকে চেনেন না বলেন জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকার। একই কথা বলেছেন পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী।
তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামা। তিনি বলেন, নয়নাল দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তিনি ছোট থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে চলতেন। পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক জনির চাচা ছিলেন।
কাটাখালী পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক জনি ইসলাম বলেন, নয়নাল আমার চাচাত চাচা। আমার জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি তিনি আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুর জন্য পাগল ছিলেন। দলের একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও উপস্থিত হতেন তিনি। তার এরকম মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। পুলিশ চাচার সঠিক তদন্ত করে আসল মৃত্যুর রহস্য বের করবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ১২ তলা থিম ওমর প্লাজা। আটতলা পর্যন্ত শপিং মল। বাকি চারতলা আবাসিক। এই ভবনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন এমপি ফারুক।
এই ভবনের পাশেই এমপি ফারুকের রাজনৈতিক কার্যালয়। থিম ওমর প্লাজা এবং রাজনৈতিক কার্যালয়ের মাঝামাঝি স্থানে পেছন দিকের সীমানা প্রাচীরসংলগ্ন ছোট একটি ম্যানহোল। সেখানেই পড়ে ছিল ওই ব্যক্তির লাশ। রাজনৈতিক কার্যালয় এবং থিম ওমর প্লাজার চারপাশ সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। যেখানে ম্যানহোল, সেই স্থানটিও ওপরে মোটা রডের নেট দিয়ে ঘেরা। দেয়াল টপকে কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না।
ওমর ফারুক চৌধুরী এবারও রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ার পর তিনি তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রতিদিনই দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে সেখানে। এই লাশটির ব্যাপারে কথা বলতে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
থিম ওমর প্লাজার সিকিউরিটি ইনচার্জ জুবায়ের হোসেন বাপ্পী বলেন, প্রতিদিন সকালে নিরাপত্তা প্রহরীরা চারপাশ ঘুরে দেখেন। মঙ্গলবার সকালে রোম্মান নামের এক নিরাপত্তা প্রহরী রাজনৈতিক কার্যালয়সংলগ্ন শৌচাগারের ম্যানহোলে মরদেহটি পড়ে থাকতে দেখেন। মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। পরে বিষয়টি এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে জানানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে এই এলাকায় তীব্র একটি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গন্ধের অনুসন্ধান করতে গিয়ে থিম ওমর প্লাজার ম্যানহলে মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহটি অর্ধগলিত ছিল। চেহারাতেও কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। তার মানিব্যাগে থাকা পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে পরিচয় জানা যায়। মরদেহটি কয়েক দিন আগের। ম্যানহোল থেকে তোলার সময় কয়েক স্থানে শরীরের চামড়া উঠে গেছে। তাই কোনো আঘাত ছিল কী না তা বোঝা যায়নি। ময়নাতদন্তের পর এটি চিকিৎসকেরা বলতে পারবেন।