বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
টানা তিন মেয়াদে রাজশাহী-১ আসনে (তানোর-গোদাগাড়ী) সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির বিপরীতে অর্জন হিসেবে শুধু ‘সন্তোজজনক’ শব্দই ব্যবহার করে গেছেন। অর্থাৎ উল্লেখ করার মতো তেমন উন্নয়ন কাজ করেন নি। কিন্তু অর্জনে ‘সন্তোজনক’ মাত্রা ব্যবহার করলেও তার ব্যক্তি সম্পদের বৃদ্ধির গতি ছিলো ভিন্নমাত্রার! তবে ২০২৩ সালের হলফনামায় অর্জনের মাপকাঠিতে যোগ হয়েছে ‘সংখ্যা’।
এমপি ফারুক চৌধুরীর হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৯৪.৩০ শতাংশ। বেড়েছে অস্থাবর সম্পত্তিও। তবে কমেছে বার্ষিক আয়।
গত ১৫ বছর ধরে মোট ৪ টি করে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন তিনি। প্রতিশ্রুতির বিপরীতে অর্জন সন্তোষজনক হিসেবে দাবি করে দায় সেরেছেন। তবে ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তার ৪ টি প্রতিশ্রুতির প্রথমটি ছিলো পল্লী সড়ক পাকাকরণ। যেখানে তিনি অর্জন হিসেবে দেখিয়েছেন ১৫ বছরে ২৫১ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ। যা কি না তার নির্বাচনী এলাকার পল্লী রাস্তার ৭৫ শতাংশ।
তার দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি ছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ। তিনি অর্জন হিসেবে দেখিয়েছেন ১১৯ টি প্রাইমারি, ৯৩ টি মাধ্যমিক স্কুল ও একটি টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণ। তৃতীয় প্রতিশ্রুতি ছিলো সামাজিক নিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন। যেখানে অর্জন হিসেবে দেখিয়েছেন শতভাগ ভাতার ব্যবস্থা ও সর্বোচ্চ সংখ্যক ভূমিহীনদের বাড়ি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণ। এছাড়া শেষ প্রতিশ্রুতি ছিলো বেকারত্ব দূরীকরণে সহায়তা। অর্জন হিসেবে ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে ও শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বেকারত্ব লাঘবের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, ২০২৩ সালে এসে এমপি ফারুক চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি নগদ টাকা ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৬ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৬ টাকা, আরেক ব্যাংকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ অপরআরেকটি ব্যাংকে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়া ঋণপত্র ছিলো ৬ লাখ ৩৩ হাজার, সঞ্চয়পত্র ২ লাখ, যানবাহন ১৮ লাখ, স্বর্ণ ২৫ হাজার, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭২ টাকা। এছাড়া তিনি আসবাবপত্রকে ‘উপহার’ হিসেবে পাওয়া বলে দাবি করেছেন।
যা ২০০৮ সালে ছিলো- অস্থাবর সম্পদবাবদ নগদ টাকা ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৫০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৩০ লাখ, সঞ্চয়পত্র ৯ লাখ ৫০ হাজার, যানবাহন ৪০ হাজার, স্বর্ণ ২০ ভরি ২৫ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, দিনার ইন্ড্রাষ্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডে বিনোয়োগ ৬ লাখ, লিটিল কন্সট্রাকশন ইকুইপমেন্টসে ৭ লাখ ২২ হাজার ৩৫ টাকা। সর্বমোট ৫৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৫ টাকা।
এছাড়া বর্তমানে তার কোন ঋণ ও দায় না থাকলেও ২০০৮ সালে তার ঋণের পরিমাণ ছিলো কোটি অঙ্কে। মেসার্স লিটিল কন্সট্রাকশন নামে কম্পজিট বিনিয়োগ লিমিটে ১১ কোটি টাকার মধ্যে তার একক ঋণ ছিলো ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। মেসার্স দিনার ইন্ড্রাষ্টিজের নামে কম্পজিট বিনিয়োগ ১৯ কোটি টাকা। যেখানে তার যৌথ ঋণ ছিলো ১১ কোটি ৪ লাখ ১ হাজার টাকা।
২০০৮ সালের হলফনামায় এমপি ফারুক চৌধুরী কৃষিখাত থেকে আয় ছিলো ৬৪ হাজার ৮৯৫ টাকা, ঠিকাদারী ব্যাবসা ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৪, পারিতোষিক ৪৮ হাজার এবং অন্যান্য ৪৪ হাজার ৭৭৫ টাকার বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন। অর্থাৎ সে সময় তার বাৎসরিক আয় ছিলো ৮৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২৪ টাকা।
যা ২০২৩ সালে এসে কমেছে। ২০২৩ সালের হলফনামায় শুধু নিজে কৃষি খাতে আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ টাকা, ভাড়াবাবদ ৩৮ লাখ ৫০ হাজার, শেয়ার ও ব্যাংক আমানতের সুদ ১২ হাজার ২০১, চাকুরী ৬ লাখ ৬০ হাজার ও অন্যান্য ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। অর্থাৎ তার বাৎসরিক আয় মোট ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ২০১ টাকা।
অপরদিকে, অস্থাবর সম্পত্তি ২০০৮ সালে ছিলো-সপুরা বিসিক শিল্পে বিনিয়োগ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, ঢাকা মোহাম্মদপুরে প্রমিনেন্ট হাউজিং প্রজেক্ট বিনিয়োগ ৮ লাখ ৫০ হাজার, ৬০ বিঘা উত্তরাধিকারী সূত্রে কৃষি জমি, ১০ বিঘা অকৃষি জমি, সাগরপাড়ার আবাসিক বাড়ি, গেবামূল্যে দশমিক ১৬২০, বন্টননামামূল্যে প্রাপ্ত অকৃষি জমি দশমিক ৭৯ শতাংশ, হেবাবিল এওয়াজ মূল্যে প্রাপ্ত অকৃষি জমি দশমিক ১৬২১।
২০২৩ সালে ফারুক চৌধুরী স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে কৃষি জমি ৬০ বিঘা, অকৃষি জমিবাবদ ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, দালান ৮৫ লাখ, বাড়ি এপার্টমেন্ট ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ও অন্যান্য অন্যান্য ৫৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা হলফনামায় দেখিয়েছেন। (স্থাবর সম্পতির মূল্যসহ বিস্তারিত তথ্য হলফনামায় প্রদর্শিত না থাকার কারণে অর্থের অঙ্কে পরিমাপ করা যায় নি)।