এমপি বাদশা: ৫ প্রতিশ্রুতি পূরণেই টানাটানি, ব্যক্তি সম্পদের উন্নতি প্রায় ৬৫ শতাংশ

আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোনো অর্জনই ছিলো না এমপি ফজলে হোসেন বাদশার। ক্ষমতাসীন দলের জোটসঙ্গী হওয়ার বৌদলতে ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো এমপি হয়েছিলেন ফজলে হোসেন বাদশা। এরপর জনগণকে দিয়েছিলেন ৪৪ দফা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ৫ বছর পর সেই প্রতিশ্রুতিগুলোর মাত্র ৫ টি বাস্তবায়নে কাজ করেছেন তিনি। যদিও সে কাজগুলো নিয়ে আছে নানা বিতর্ক। বাকি ৩৯ টি প্রতিশ্রুতির কোনো অগ্রগতি নেই। তবে অর্ধদশকে নিজের ব্যক্তি সম্পত্তির উন্নতি করেছেন ৬৪.৭৫ শতাংশ।

এমপি বাদশার হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি রাজশাহীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের অঙ্গীকার দিয়েছিলেন এবং দাবি করেছেন শহরের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয়ত তিনি রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের সোনাইকান্দি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত ২৬৮ কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণকে নিজের অঙ্গীকারের অগ্রগতি হিসেবে দাবি করেছেন। অথচ প্রকল্প এলাকার সিংহভাগই সংসদীয় আসন-৩ (পবা-মোহনপুর) এর মধ্যে। তৃতীয়ত রেশম কারখানা চালুর অঙ্গীকারকে অর্জন হিসেবে দেখিয়েছেন। এছাড়া বিমানবন্দর সচল ও বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানকে নিজের অঙ্গীকারের অর্জন হিসেবে দাবি করেছেন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ১৪ দল মনোনিত ও মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার ৪৪ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন।

এরমধ্যে ছিলো- তরুণ-তরুণীদের তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, কল-কারখানা ও বাসাবাড়িতে দ্রুত গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, রাজশাহী রেশম কারখানা পুরোপুরি চালু, রাজশাহী টেক্সটাইল মিল সংস্কার ও আধুনিকায়ন করে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু, পদ্মা ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা, শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ, বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা, পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার স্থাপন, রাজশাহী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু স্থাপন এবং মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে রাজশাহীতে আধুনিক মানের আর্কাইভ ও জাদুঘর স্থাপন এবং বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরকে বিশ্ব পরিসরে তুলে ধরা, রাজশাহী বিমানবন্দরটিকে কার্গো ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ সুবিধাসহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত, রাজশাহী থেকে চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু, রাজশাহী-কোলকাতা ট্রেন ও বিমান সার্ভিস চালু, ঢাকা-রাজশাহী একাধিক বিরতিহীন ট্রেন চালু, রাজশাহীর সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি জাতীয় মহাসড়ককে ৪ ও ৬ লেনে উন্নীত করা, রাজশাহীর কাঁচাবাজারগুলোর উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন কশাইখানা স্থাপন, রাজশাহী থেকে সরাসরি হজ্ব ফ্লাইট চালু, কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় কৃষি আদালত স্থাপন এবং শস্যবিমা চালুতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।

এদিকে, ২০১৮ সালের হলফনামায় এমপি বাদশা সোনালী সংবাদ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, মহানগর প্রিন্টিং প্রেস থেকে ৩০ লাখ টাকা, নগদ ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৬ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা, যানবাহনে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, জিপ প্রাডো ৩৮ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, খন্দকার মার্কেট ২০ লাখ টাকা এবং ঢাকার উত্তরায় ৫ কাটা জমিতে ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৩৬ টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়া ২০১৮ সালে ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৪২২ টাকা।

অপরদিকে, ২০২৩ সালের হলফনামায় সোনালী সংবাদ থেকে আয় ২ লাখ ৫ হাজার, মহানগর প্রিন্টিং প্রেস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার, খন্দকার মার্কেট অ্যান্ড কমপ্লেক্সে ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৮২৩ টাকা, ব্যাংক মুনাফা ২ লাখ ২১ হাজার ২৯১ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত হিসেবে ১ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার ২৪৫ টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা, সংসদ সদস্য ভাতা ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩ টাকা, নগদ ২৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার ২৪৫, জিপ গাড়ি ৭০ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, খন্দকার মার্কেটের অংশীদার ৬০ লাখ টাকা, উত্তরায় ৫ কাটা জমি ৩৭ লাখ ২৭ হাজার ৭৩৬ টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়া স্বর্ণ ৫ ভরি দেখিয়েছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫ লক্ষ টাকার বেশি।