ওষুধ কেন অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ! সমাধান কোন পথে

আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৩, ১২:২১ পূর্বাহ্ণ

ওষুধ। যেটা সাধারণত প্রাণরক্ষাকারী উপাদান হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। যেই উপাদন রোগাক্রান্ত মানুষকে অসুস্থ থেকে সুস্থ করে তোলে। কিন্তু অবাক করা তথ্য হলো, ওষুধ খেয়ে অসুস্থতা ও মৃত্যুর সংখ্যাটাও নিতান্তই কম না। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সূত্র মতে, শুধু ১৯৭৮ সালে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৫ লাখ রোগি সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ খেয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল। সমীক্ষার তথ্য বলছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩০ শতাংশ রোগী ওষুধ খেয়ে আরও বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। ১৯৯০ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ওষুধের কারণে এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আর এসব মৃত্যুর কারণ প্রেসক্রিপশন ড্রাগ! এটা একটি উন্নত দেশের চিত্র হলে সারা পৃথিবীতে কি ঘটছে তা আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন। তবে এটা দিয়ে সহজেই অনুমেয় সারা পৃথিবীতে কি ঘটছে। এর সমাধানের পথ খুঁজতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মুনীরউদ্দিন আহমদের লেখা একটি প্রবন্ধের প্রকাশিত একটি জরিপের তথ্য মতে, ১৯৬১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত নিরাপদ হিসাবে আখ্যায়িত করে সারা বিশ্বে ২ লাখ ৫ হাজারের বেশি ওষুধ বাজারজাত করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার নতুন ওষুধ বাজারে ছাড়া হয় এবং ১২ হাজার বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৩ সালে চিকিৎসা বাবদ ৯১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়। চিকিৎসাসেবার ধরন, মান ও টাকার অঙ্ক হিসাব করলে যে কারও ধারণা হতে পারে, আমেরিকানরা বিশ্বের সবচেয়ে সুস্থ জাতি। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। মহিলাদের আয়ুষ্কালের দিক থেকে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের স্থান ১৬ এবং পুরুষদের ১৭।
ওষুধের কারণে কেন মানুষ এত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তায় রয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ওষুধের কারণে মৃত্যু বা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পেছনে কাজ করছে চিকিৎসক ও রোগী কর্তৃক ভুল ওষুধ প্রয়োগ বা গ্রহণ। প্রশ্ন ওঠে, এসব ক্ষতিকর ওষুধ কীভাবে বাজারে আসে বা বাজারে আসার অনুমতি লাভ করে? তবে একটি বিষয় স্পষ্ট বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর একটি বড় স্বার্থ এখানে জড়িত।
২০০৪ সালে বিশ্বের খ্যাতনামা ওষুধ কোম্পানি মার্ক তাদের ক্লকবাস্টার ওষুধ ভায়োক্স (জেনেরিক রফেকক্সিব) হাজার হাজার হৃদরোগ ও স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর কারণে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। আরও একটি ওষুধ থ্যালিডোমাইডের কথা সর্বজনবিদিত। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এ ওষুধটি গর্ভবতী নারীদের প্রদানের কারণে বিশ্বব্যাপি হাজার হাজার শিশু অঙ্গবিকৃত বা অঙ্গহীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করার পর ওষুধটি বাজার থেকে তুলে নেয় ওষুধটির আবিষ্কারক কোম্পানি গ্রুনেনথাল। এসব করুণ পরিণতির জন্য জীবজন্তু ও মানুষের ওপর ওষুধগুলোর অপর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষকদের বিভ্রান্তি কর তথ্য ও দুর্নীতিকেই দায়ী করা হয়। সমাধানের পথটা জটিল। বাস্তবতাও কঠিন। সুতরাং ব্যক্তি সচেতনতাই পরিত্রাণের একটি বড় উপায়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ