রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিস্তর বিতর্ক আছে। এ বিতর্ক এখনো চলছে। মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক কারিকুলামের আওতায় আনার প্রচেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে অব্যাহত আছে। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সহজ নয়। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে ধর্মীয় আবেগ তো বটেই কট্টর অবস্থানের ব্যাপাটি খুবই শক্তভাবে জড়িয়ে আছে। এই কট্টরতাই উগ্র মৌলবাদের দীক্ষাকেই ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশব্যাপিয়া কওমী মাদ্রাসাগুলোকে কোনোভাবেই একটি নিয়ািন্ত্রত কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কওমী মাদ্রাসাগুলো নিজেদের মত করেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই পরিস্থিতির নির্মম শিকার হচ্ছে এসব মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে যে সনদ পাচ্ছে তা সরকার কর্তৃক স্বাভাবিকভাবেই স্বীকৃত হচ্ছে না। ফলে ওইসব শিক্ষার্থীরা সরকারি- বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। যা একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনছে না।
বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা কত তার আনুষ্ঠানিক কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ইসলামপন্থী নেতাদের মধ্যে বিভেদের সূত্র ধরে ব্যক্তি উদ্যোগেই গড়ে উঠেছে অন্তত পাঁচটি বোর্ড। এগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার মাদ্রাসা। এ ধরনের একটি বোর্ড বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ড- যেটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বর্তমানে চরমোনাই পীর হিসেবে পরিচিত মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের প্রয়াত পিতা।
দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অক্ষুণœ রেখে তাদের দেয়া সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ওই বোর্ডের নেতৃবৃন্দ। বুধবার ঢাকায় তাদের এক প্রতিনিধি সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা বলেছেন মাদ্রাসায় সরকারি কোনও নিয়ন্ত্রণ তারা মেনে নেবেন না। কিন্তু শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেছেন, দাবি আদায়ের জন্য নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য ঘুচিয়ে হেফাজতে ইসলামের প্রধান মাওলানা আহমদ শফির নেতৃত্বেই সবাইকে কাজ করতে হবে। কিন্তু মাওলানা শফির নেতৃত্বের কমিটি দীর্ঘ সময় ধরে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি।
দেশজুড়ে ব্যক্তি বা স্থানীয় উদ্যোগে স্থাপিত কওমী মাদ্রাসাগুলোর সিলেবাস কিংবা প্রশাসনিক বা আর্থিক ব্যবস্থাপনা কোন কিছুতেই সরকারি কোন নজরদারি কিংবা তত্ত্বাবধানের সুযোগ নেই। তবে মাদ্রাসাগুলোতে কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে বা এর প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সরকারের কোন ভূমিকা থাকবে না এটা তো হতে পারে না। তবে এ ব্যাপারেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত বা মন্তব্য করা হচ্ছে না। এটা ঠিক যে, কওমী মাদ্রাসার ব্যাপারে দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে আসা বাঞ্ছনীয়। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জন যদি বাস্তব জীবনে কোনো প্রয়োজনে না আসে, সে ক্ষেত্রে সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। সরকার তাদের সনদপত্রের স্বীকৃতির বিষয়টি গ্রাহ্য না করলে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সমাজের বোঝা হিসেবেই গন্য হতে থাকবে। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আবার সরকার দায় নিলে তার নিয়স্ত্রণ থাকতে হবে। প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা এবং শিক্ষা কররিকুলাম প্রণয়নেও সরকারের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ অবস্থান শিক্ষার্থীদের জন্য মোটেও সুখকর হবে না। যারা ভীষণ কট্টরতা দেখাচ্ছেন, তাদেরও শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর কল্যাণের কথা চিন্তা করে সমাধানের যৌক্তিক পরিণতির দিকে যেতে হবে। ভাল কিছু অর্জনের জন্য অবশ্যই নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই আসতে হবে।