কন্তের চেলসিকে থামাতে ব্যর্থ গার্দিওলাও

আপডেট: ডিসেম্বর ৪, ২০১৬, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



বার্সা-রিয়ালের ম্যাচের আগেই ‘ক্লাসিক’ একটা ম্যাচ দেখলেন ফুটবলপ্রেমীরা। দুই দলের দুর্দান্ত আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ, শেষ দিকে মারামারি, দুই লাল কার্ডÍএসবের মাঝে একটা মুহূর্তও সম্ভবত চোখের পাতা ফেলার সুযোগ ছিল না। প্রিমিয়ার লিগে চেলসি-ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচটি গতকাল ছিল এমনই উত্তেজনায় ঠাসা। যার শেষে অবশ্য স্কোরলাইনটা চেলসির দুর্দান্ত দাপটই দেখাচ্ছে। ম্যানচেস্টার সিটি ১ , চেলসি ৩!
লিগে আর্সেনালের কাছে হারের পর সেই যে ৩-৪-৩ ফর্মেশনে গেল চেলসি, এরপর থেকে দুর্দান্ত দাপুটে একের পর এক ম্যাচ জিতে চলেছে। কালকের ম্যাচের আগে টানা সাত ম্যাচে জয়, গোল করেছে ১৯টি, খেয়েছে মাত্র ১টি। কাল শুরুতেই অবশ্য গার্দিওলা চমকে দিয়েছিলেন। তিনিও চেলসির জবাব দিতে চাইলেন ৩-৪-৩ ফর্মেশনে দল সাজিয়ে, মিডফিল্ড ভরিয়ে রাখলেন ডি ব্রুইন-সিলভা-গুন্ডোয়ানের মতো বল পায়ে দক্ষ ফুটবলারদের নিয়ে। উদ্দেশ্য, বল বেশি দখলে রেখে চেলসি রক্ষণকে চাপে রাখা। কিন্তু হলো কি? সিটি আক্রমণের পর আক্রমণ করেছে ঠিকই, কিন্তু সর্বনাশ হয়ে গেছে প্রতিআক্রমণে। তিনটি প্রতিআক্রমণ, তিনটি গোল চেলসির!
এ নিয়ে লিগের শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলোর দুটির সঙ্গে খেলল গার্দিওলার সিটি (টটেনহাম ও চেলসি), হারল দুটির সঙ্গেই। অথচ প্রথমার্ধটা অন্য ইঙ্গিতই দিচ্ছিল। পুরো ইংলিশ ঢংয়ের ৪৫ মিনিট। প্রচ- গতি, দুই উইংয়ে দিয়ে দুই দলের একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া, বক্সের একের পর এক ক্রস। শেষ পর্যন্ত গোলটা হলো রক্ষণের ভুলে। ডান দিক থেকে হেসুস নাভাসের ক্রস এল চেলসি বক্সে, গ্যারি কাহিল সেটি ভলি করে ফেরাতে গিয়ে উল্টো জড়িয়ে দেন নিজেদের জালে।
প্রথমার্ধেই অবশ্য সিটি গোল পেতে পারত আরেকটি। ২৫ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনের ফ্রি কিকে হেড করে বল জালে জড়িয়েও দিয়েছিলেন ফার্নান্দিনহো, কিন্তু হেডটা করার সময়ে তিনি ছিলেন অফসাইড। দুটি পেনাল্টির আবেদনও করেছিল, প্রথমে কাহিলের হ্যান্ডবল, এরপর বক্সে গুন্দোয়ানের ওপর কান্তের ট্যাকলের কারণে। কিন্তু দুবারই রেফারি সাড়া দেননি আবেদনে। প্রথমার্ধেই আগুয়েরোকে ফাউল করায় ডেভিড লুইজের লাল কার্ডও দাবি করে সিটি। সেই আবেদনেও সাড়া দেননি রেফারি অ্যান্থনি টেইলর। তখন কি আর সিটি জানত, ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে সেই লুইজকেই ফাউল করে লাল কার্ড দেখবেন আগুয়েরো, পাশাপাশি একই ঘটনায় মারামারিতে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখবেন ফার্নান্দিনহোও।
দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুতে দুবার সিটি সুযোগ পেয়েছিল এগিয়ে যাওয়ার। প্রথমে আগুয়েরোর শট ফিরিয়ে দেন চেলসি গোলরক্ষক কোর্তোয়া। এরপর ডি ব্রুইনের মিসটা তো অবাক করার মতো, তিন গজ দূর থেকে খালি পোস্ট পেয়েও সিটির বেলজিয়ান মিডফিল্ডার বল মারের বারের ওপর দিয়ে। সেটিই যেন হলো কাল। ৬০ মিনিটে চেলসিকে সমতায় ফেরান ডিয়েগো কস্তা। মাঝমাঠ থেকে ফ্যাব্রিগাসের ভেসে আসা বলটি দুর্দান্ত দক্ষতায় বুক দিয়ে নামালেন, এরপর হ্যান্ডবলের আবেদনে ব্যস্ত ওটামেন্ডিকে পাশ কাটিয়ে বল জড়িয়ে দিলেন পোস্টে।
সেই থেকেই যেন সিটির পথ হারানোর শুরু। ৭০ মিনিটে আবারও প্রতিআক্রমণে কুপোকাত। গুন্ডোয়ান বল নিয়ে সিটির বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন, সেটি ঠেকিয়ে দিয়েই চেলসির তিন পাসের দুর্দান্ত প্রতি আক্রমণ। কস্তা হয়ে বল এল একটু আগেই পেদ্রোর বদলি নামা উইলিয়ানের কাছে। বলটা পোস্টে জড়িয়ে দিতে কোনো সমস্যাই হলো না ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারের। কস্তা ও উইলিয়ান, দুজনের উদযাপনেই মিশে থাকল বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করা ব্রাজিলিয়ান দল শাপেকোয়েন্সের ফুটবলাররা। গোল করে দুজনই বাহুতে রাখা কালো আর্মব্যান্ডটি উঁচু করে ধরেন, যাতে লেখা শাপেকোয়েন্স।
শেষ ধাক্কাটা গার্দিওলার দল খেল ম্যাচের ৯০ মিনিটে। আবারও প্রতিআক্রমণে। ডিফেন্স থেকে মার্কোস আলোনসোর লম্বা বল পেয়ে এক দৌড়ে সিটি বক্সে ঢুকে যান হ্যাজার্ড। এরপরের দৃশ্যটা এবার প্রিমিয়ার লিগে অনেক পরিচিত, হ্যাজার্ডের শট জড়িয়ে যাচ্ছে জালে।
তাতেই এল এখন পরিচিত আরেকটি দৃশ্য, ম্যাচ শেষে চেলসি খেলোয়াড়দের উদযাপন। টানা আট জয়। সেটি এলও দুর্দান্ত কঠিন প্রতিপক্ষ সিটিকে হারিয়ে। গার্দিওলার সিটি।-প্রথম আলো অনলাইন