কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রয়াণ দিবস

আপডেট: মে ১৭, ২০২৪, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


আজ নাট্যকার ও সঙ্গীতজ্ঞ কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ১১১তম প্রয়াণ দিবস। তিনি ১৯১৩ সালের ১৭ মে কোলকাতায় মারা যান। তিনি পাঁচ শতাধিক গান রচনা করেছেন। এ গানগুলো ‘দ্বিজেন্দ্রগীতি’ নামে পরিচিত। তার বিখ্যাত গান ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’, ‘বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ’ ইত্যাদি সমান জনপ্রিয় আজও। তার রচিত কাব্যগ্রন্থ-গুলোর মাঝে ‘আর্যগাথা’ (১ম ও ২য় ভাগ) ও ‘মন্দ্র’বিখ্যাত।

কবি, নাট্যকার ও সংগীতস্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজবংশের দেওয়ান। তার বাড়িতে বহু গুণিজনের সমাবেশ হতো।

বাংলায় জনপ্রিয়তা পাওয়া দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে অন্যতম হল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’। তিনি ডিএল রায় নামে বেশি পরিচিত। পাঁচ শতাধিক গান লিখেছেন তিনি- যা দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত।

১৮৭৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১০ টাকা বৃত্তি লাভ করেন দ্বিজেন্দ্রলাল। এফএ পাস করেন কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে। হুগলি কলেজ থেকে বিএ ও ১৮৮৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এমএ পাস করেন। কিছুদিন ছাপরার রেভেলগঞ্জ মুখার্জ্জি সেমিনারিতে শিক্ষকতা করেন। এরপর কৃষিবিদ্যা পড়তে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড যান। রয়্যাল এগ্রিকালচারাল কলেজ ও এগ্রিকালচারাল সোসাইটি হতে কৃষিবিদ্যায় এফআরএএস এবং এমআরএসি ও এমআরএস ডিগ্রি লাভ করেন। ইংল্যান্ডে থাকাকালিন ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত হয়েছে একমাত্র ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ লিরিকস অব ইন্ডিয়া।

ওই বছরই দেশে ফিরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তিন বছর বিদেশে থাকার জন্য তাকে প্রায়-শ্চিত্ত করতে বলা হয়েছে। এতে অসম্মতি জানালে অনেক ধরনের সামাজিক উৎপীড়ন সহ্য করতে হয়।

ভারতে ফিরে জরিপ ও কর মূল্যায়নে প্রশিক্ষণ নিয়ে মধ্যপ্রদেশে সরকারি দফতরে যোগ দেন দ্বিজেন্দ্রলাল। পরে দিনাজপুরে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ পান। ১৮৯০ সালে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুতা পরগনায় সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজ করাকালে কৃষকদের অধিকার নিয়ে বাংলার ইংরেজ গভর্নরের সঙ্গে বিবাদ ঘটে। অসুস্থতার কারণে ১৯১৩ সালে অবসর নেন।

দ্বিজেন্দ্রলালের মূল অবদান ধরা হয় সঙ্গীতে। তার গানে দুটি ভিন্ন ধারা বিদ্যমান- ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও ইউরোপীয় ধ্রুপদি সঙ্গীত। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ধ্রুপদ ও খেয়াল তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এর উপর ভিত্তিকে অনেক গানে সুর করেন। এ ছাড়া কয়েকটি কীর্তনাঙ্গ গান রয়েছে। তার গানের অনুষঙ্গ হলো দেশপ্রেম ও রঙ্গরস। বাংলায় হাসির গানে তার অবদান অতুলনীয়।

উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ধনধান্যে পুষ্পভরা, ওই মহাসিন্ধুর ওপার হতে, আমি তোমার কাছে ভাসিয়া যাই, মলয় আসিয়া বলে গেছে কানে, পতিতোদ্বারিনী গঙ্গে, কে গান গেয়ে গেয়ে চলে যায়, নিখিল জগত সুন্দর সব, আজি বিমল নিদাঘ প্রভাতে, তোমারেই ভালবেসেছি আমি, ঘনতমসাবৃত অম্বর ধরণী, এসো প্রাণসখা এসো প্রানে, নীল আকাশের অসীম ছেয়ে, একি শ্যামল সুষমা, চরন ধরে আছি ও বেলা বয়ে যায়।

১৮৮৭ সালে বিখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের মেয়ে সুরবালা দেবীকে বিয়ে করেন।