নিজস্ব প্রতিবেদক:
শুক্রবার দুপুর দুইটা। জুম্মার নামাজ শেষে সবাই ব্যস্ত বাসায় ফিরতে। রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়া বাজারে শুকুর আলী এসেছেন মাছ কিনতে। আড়াই কেজি ওজনের একটি পাঙ্গাস মাছের দাম করছিলেন। মাছ বিক্রেতা একদাম ২২০ টাকা বলেছে। তিনি ১৮০ টাকার বেশি আর দিবেন না। বিক্রেতাও ওই দামে আর ছাড়তে চাইলেন না। তিনি অন্য দোকানের দিকে হাঁটা দিলেন।
নগরীর টিকাপাড়ার বাসিন্দা শুকুর আলী। ওই এলাকাতেই তার পান-সিগারেটের দোকান আছে। তিনি বলেন, জুম্মার নামাজের পর মাছের দাম কম পাওয়া যায়। ওই জন্য এসময় মাছ কিনতে এসেছি। কিন্তু এই সপ্তাহে কম দামে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহে দাম বেড়েই চলেছে। পান সিগারেট বিক্রি করে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। মনমতো সবজিও কেনা যাচ্ছে না।
রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে এদিন পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি পর্যন্ত। সিলভার কার্প মাছ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০, নাইলোটিকা ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও রুই, কাতলা আকার ভেদে ৩০০-৬৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি। ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, মলা মাছ ৫০০-৭০০, শিং মাছ ৫০০-৭০০, মাগুর ৬০০ ও কই মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাছ বিক্রেতা আবদুস সাত্তার বলেন, আমাদের বেশি দামে আড়ত থেকে মাছ কিনে নিয়ে আসতে হচ্ছে। এজন্য কিছুটা লাভ রেখে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা মনে করছে আমরা দাম বাড়িয়েছি।
ক্রেতাদের বলছেন, অতি দ্রুত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নিয়মিত বাজার তদারকির তাগিদ দিচ্ছেন তারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বিপাকে আছে নি¤œআয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। রাজশাহীর কাঁচাবাজারে সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়তেই আছে। তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
রাজশাহীর বাজারে কোনো সবজিই মিলছে না ৫০ টাকার নিচে। শুক্রবার মহানগরীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ টাকা। এর আগের শুক্রবারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। এছাড়াও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি, দেশি রসুন ২৬০, আমদানিকৃত রসুন ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
আদা কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। কাঁচা মরিচের দাম ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা। বেগুন বেড়ে হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। পটল, ঢ্যাঁড়স, লাউসহ কিছু সবজি মিলছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। আর শিম, মুলা, ফুলকপির মতো শীতকালীন সবজির দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে।
সাবেহবাবাজারে বাজার করতে আসা আবদুল্লাহ আল মামুন নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এখন ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। কয়েক বছর আগে ৩০০ টাকায় ব্যাগ ভর্তি হলেও এখন হাজার টাকাতেও ভরেছে না। প্রতিটি জিনিসের দাম কয়েকগুন বাড়ছে। দাম কমার তো কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নিয়মিত বাজার তদারকি করে যেন দামটা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা হয়।
সবজি বিক্রেতা ইলিয়াস আলী বলেন, আজ যে সবজি ৮০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে তা বুধবারে ৭০ টাকাতে পাওয়া গিয়েছিল। আবার আগামী পরশু দিন দামও আরও বাড়তে পারে। আমাদের এভাবেই কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের লাভও থাকছে না।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, আমরা প্রায় বাজার মনিটরিং করছি। সরকার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে দিয়েছে। আমরা সব ব্যবসায়ীদের সতর্ক করছি। ব্যবসায়ীরা কথা না শুনলে আমরা হার্ডলাইনে যাবো খুব শিগগিরই।’