শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
“ফিদেল দীর্ঘজীবী হোন! আমরা তার কথা শুনতে পাচ্ছি, আমরা তাকে অনুভব করছি, তিনি সবসময় থাকবেন”
হাভানার রেভ্যুলেশন স্কয়ারে জড়ো হয়ে সোমবার ভোরে এভাবেই স্লোগানে স্লোগানে প্রিয় নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে শেষ বিদায় জানিয়েছে কিউবার হাজারো মানুষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, রেভ্যুলেশন স্কয়ারে জড়ো হওয়া অনেকেরই হতে ছিল ব্যানার, তাতে লেখা, ‘আমরা ফিদেল’। ‘আত্মমর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার পথ দেখানো’ বিপ্লবী নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে আসা অনেকেরই শরীরে জড়ানো ছিল কিউবার লাল সাদা নীল পতাকা।
বামপন্থি বিপ্লবে দেশকে জাগিয়ে তুলে অর্ধশতাব্দি প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিউবার নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন ফিদেল কাস্ত্রো। গত শতকের ‘ঠা-া লড়াইয়ের’ পুরোটা সময় পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রকে ‘প্রতিরোধ’ করে গেছেন তিনি।
কিউবার সাম্প্রতিক ইতিহাসের কেন্দ্র হয়ে ওঠা রেভ্যুলেশন স্কয়ারে দীর্ঘ উদ্দীপনাময়ী অনেক বক্তৃতা দিয়েছেন বিপ্লবের ‘কমান্দান্তে’ ফিদেল, সেই স্থানটিতেই তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভোর ৪টা থেকে জড়ো হতে শুরু করে মানুষ।
স্প্যানিশ বচনে তাদের কণ্ঠে ছিল সেই বিদায়ের গান- ‘হাসতা সিয়েমপ্রে, কমান্দান্তে!’ অর্থাৎ, চিরকাল, হে কমান্ডার।
এক দশক আগে স্বাস্থ্যজনিত কারণে সহযোগী বিপ্লবী ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর থেকে অবসর জীবনযাপন করছিলেন ফিদেল। শুক্রবার কিউবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ২৯ মিনিটে ৯০ বছর বয়সে তার জীবনাবসান ঘটে। মুক্তি সংগ্রামী সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘কিংবদন্তি’; পুঁজিবাদী পশ্চিমা শাসকদের চোখে ‘স্বৈরাচার’।
রেভ্যুলেশন স্কয়ারে সোমবার দুই দিনব্যাপী স্মরণানুষ্ঠানের সূচনা হয় ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে। হাজার হাজার মানুষ লাইন ধরে তরুণ ফিদেলের একটি ছবির পাশ দিয়ে হেঁটে যান। সাদাকালো ওই ছবিতে সামরিক পোশাক পরা বিপ্লবী তরুণ ফিদেল পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন, তার পিঠে রাইফেল ও রসদের ব্যাগ।
আলাদা আরেকটি অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো ও ফিদেলের জ্যেষ্ঠ সহযোগীরা একই ছবির আরেকটি কপির সামনে সাদা ফুল রেখে শোক বইতে স্বাক্ষর করেন।
ফিদেলের মৃত্যুতে নয়দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে কিউবা। তার শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে শনিবার তার মৃতদেহ দাহ করা হয়। তার দেহভস্ম একটি শবাধারে করে সারা দেশ ঘুরিয়ে শেষ গন্তব্য সান্তিয়াগো দ্য ক্যুবায় নিয়ে যাওয়া হবে।
এই সান্তিয়াগো দ্য ক্যুবা থেকেই ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার গণমানুষের মুক্তির স্বপ্নে বিপ্লবী যাত্রা শুরু করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ামিতে আশ্রয় নেয়া অনেক কিউবান ফিদেলকে অপছন্দ করলেও তার দেশের ব্যাপক মানুষ তাকে ভালোবাসতেন, শেষ বিদায় জানাতে আসা এসব মানুষের অনেকের চোখেই ছিল অশ্রু।
এদেরই একজন ৫৭ বছর বয়সী মারিয়া দেল কারমেন বলেন, “আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি, যেন আমার নিজের বাবাই মারা গেছেন, তিনি আমার দ্বিতীয় পিতার মতো। আমাদের যা কিছু আছে, চিকিৎসক হিসেবে আমার পড়াশোনা, সব কিছুর জন্য তাকে ধন্যবাদ।”
দুই ঘন্টা আগে এসে অপেক্ষা করতে থাকা ৬৫ বছর বয়সী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বেলকিস মেইরেলেস বলেন, “আমি খুব দুঃখিত। আমি আমাদের পিতা, বন্ধু ও কমান্ডারের প্রতি সম্মান জানাতে এসেছি। তিনি আমাদের মুক্ত করেছেন এবং বিশ্বব্যাপী চিকিৎসক ও শিক্ষক প্রেরণ করেছেন।”
৭২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবার্তো ভিদেও বলেন, “তিনি নিখুঁত ছিলেন না, কেউই তা নয়। ফিদেল একজন শিক্ষক, একজন দেশপ্রেমী।”- বিডিনিউজ