কষ্টে পাওয়া জায়গা হারাতে চান না সাব্বির

আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০১৭, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



নেটে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলেন এদিন একটু পরের দিকেই। নেট সেশন শেষ করেই ছুটলেন মাঠে। অনেকক্ষণ ধরে একাই একমনে চালিয়ে গেলেন ফিটনেস ড্রিল। এরপর একটু বিশ্রাম। খানিক পর আবার জিম; আরেকটু ফিটনেস ট্রেনিং সাব্বির রাহমানকে অনায়াসেই বলা যায় ‘ফিটনেস ফ্রিক’!
রাজশাহীর ছেলে সাব্বির দলের সবচেয়ে ফিট ফিল্ডারদের একজন। সেই ফিটনেস ধরে রাখার ব্যাপার আছে। তার চেয়েও বেশি আছে নিত্য নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তাড়না। নিজের ক্যারিয়ার থেকেই সাব্বির শিখেছেন, ফিটনেসই তাকে এগিয়ে নেবে প্রত্যাশিত চূড়া ছোঁয়ার দিকে। তাই চারপাশে আর যত কিছুই হোক, নিজের ফিটনেস ট্রেনিংয়ের সঙ্গে কখনোই আপোশ করেন না এতটুকুও।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রায়ই বলেন, সাব্বিরের মত ফিটনেস ফ্রিক বাংলাদেশের ক্রিকেটে আর দেখেননি। দলের অনুশীলন বা ট্রেনারের বেঁধে দেয়া রুটিন তো আছেই, ফিটনেস নিয়ে আছে সাব্বিরের নিজস্ব কিছু রুটিনও। খেলা না থাকলে বা ছুটির দিনেও সেই রুটিনে ফাঁকি নেই একটুও। বছরের প্রায় প্রতিটি দিনই নিয়ম করে ‘কোর’ করেন, ‘সিট আপ’ মারেন আর অন্তত দুশ ‘পুশ-আপ’।
ফিটনেস নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের গড়পড়তা মান ও সচেতনতা আগের চেয়ে বেড়েছে বহুগুণে। সাব্বির এখানে সবার থেকে এগিয়ে। অন্য অনেকের কাছে এটি হয়ত দায়িত্ব, তার কাছে আরেকটু বেশি কিছু। ফিটনেস ট্রেনিং তার ভালো লাগা, ভালোবাসার জায়গা। উপভোগ করেন দারুণ। এসবের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, ফিটনেসই ক্রিকেটার সাব্বিরের চালিকাশক্তি। তিনি জানালেন, অনেক সাধনায় পাওয়া জায়গাটা ধরে রাখার মূল ভিত্তি এই ফিটনেসই। আমি ফিটনেস নিয়ে সব সময় কাজ করি। জানি, ক্রিকেটে ফিটনেস আর পরিশ্রমই সাফল্যের মূলমন্ত্র। আমি এই জায়গা অনেক কষ্ট করে পেয়েছি। অনেক অপেক্ষার পর পেয়েছি। জায়গাটা আমি হারাতে চাই না। পরিশ্রমই আমাকে এত দূর এনেছে। এটাও জানি ধরে রাখতে হলে ক্যারিয়ার জুড়েই কষ্ট করতে হবে।
কষ্ট করায় তার ক্লান্তি নেই। তবে কষ্টের ফল মাঝেমধ্যে না পেলে বিচলিত হন বটে। ভাবেন, কোথায় হয়ত কমতি থেকে যাচ্ছে! লেগে যান আরেকটু বেশি ঘাম ঝরাতে। চলতি নিউজিল্যান্ড সফরেই যেমন। চারটি ইনিংস খেলেছেন, চারবারই শুরুটা করেছেন দারুণ। কিন্তু বড় ইনিংস তো দূর, অর্ধশতকও ছুঁতে পারেননি। মুহূর্তের ভুলে শেষ হয়েছে চারটি সম্ভাবনাময় ইনিংস। সবশেষ ম্যাচটিতে আউট হয়েছেন নির্বিষ এক ফুল টসে! সাব্বিরের ভাবনার জগতটিও নাড়িয়ে দিয়েছে এটি। নিজের আয়নায় দেখেছেন নিজেকে, আত্মজিজ্ঞাসায় চেষ্টা করেছেন সমস্যার মূলে যেতে।
সাব্বির বলেন, আমি চিন্তা করি। রুমে গিয়ে, একা থাকলে ভাবি ভুলটা কোথায় হচ্ছে, কোনটা ঠিকমত করতে পারছি না। ব্যাটিংয়ে সমস্যা খুব বেশি হচ্ছে না। কিন্তু হুট করেই আউট হয়ে যাচ্ছি। আমার নিজেরও প্রতিদিন মনে হচ্ছে, আজকে বড় ইনিংস হবে। কিন্তু হচ্ছে না। ফুলটস বলটায় আসলে ভাবিনি যে ওরকম ফুলটস আসবে আমার দিকে। একটু চমকে গিয়েই আউট হয়ে গেছি। ওটা আমারই ব্যর্থতা ছিল। তবে আমি বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা করছি। মানসিক দিকগুলো নিয়ে কাজ করছি। আশা করি, পরের ম্যাচগুলো ভালো করতে পারব।
মানসিক দিকগুলো মূলত মনোযোগ ধরে রাখা। মুখোমুখি প্রতিটি ডেলিভারিকেই জীবনের জন্য বলে ধরে নেয়া। তৃপ্ত না হওয়া। ২২ গজে মুহূর্তের অমনোযোগ লক্ষ্য থেকে এক ধাক্কায় ঠেলে দেয় বেশ অনেকটা দূরে। লড়াইয়ের ঝাঁঝে ব্যাটিংয়ের মৌলিকত্বটুকু না ভোলা। আর পরিশ্রম? সেটি তো আছেই। ফিটনেস নিয়ে কাজ করা আর কথা বলাতে ক্লান্তি নেই তার। ফিটনেস যে কাউকে সব জায়গায় এগিয়ে রাখে। এমনকি মানসিকভাবেও এগিয়ে রাখে। কষ্ট করলে ভাগ্যও পাশে থাকে।
তবে তিনি নিজেও জানেন, ভাগ্য গড়তে হবে নিজেকেই। তাইতো ক্লান্তিহীন ঝাম ঝরানো। অপেক্ষা পরিশ্রমের ফসল ঘরে তোলার। প্রবাদ তো আছেই, কষ্ট করলে কেষ্ট মিলবেই। সাব্বিরের যেমন, তেমনি বাংলদেশ দলেরও!