বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
শাহীন রহমান, পাবনা:
পাবনার কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে বন্ধ রয়েছে স্পীডবোট চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। দ্রুত সময়ে ঢাকায় যাতায়াতে স্পীডবোট জনপ্রিয় যাত্রীদের কাছে। ফলে বাধ্য হয়ে বর্তমানে লঞ্চ ও ফেরিতে চলাচল করছেন তারা। তবে দ্রুত স্পীডবোট চালু করতে বিআইডাব্লিউটিএর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৬ সালের দিকে এই নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরির পাশাপাশি স্পীডবোট চলাচল শুরু হয়। কাজিরহাট থেকে আরিচা নৌরুটের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। এই রুটে ৪টি ফেরি ও ৯টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে সময় কম লাগায় রাজধানীতে যাতায়াতের জন্য স্পীডবোটই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই রুটের যাত্রীদের কাছে। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষ এই রুটে স্পিডবোটে চলাচল করে। ঈদের সময় প্রতিদিন কমপক্ষে দশ হাজার যাত্রী এই রুটে স্পিডবোটে পারাপার হয়।
বিগত সরকারের সময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা তাদের লোকজনের মাধ্যমে স্পীডবোটগুলো পরিচালনা করতেন। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যায় আওয়ামীলীগ নেতারা ও তাদের লোকজন। ফলে সেইদিন থেকে বন্ধ হয়ে যায় স্পীডবোট চলাচল। এমন পরিস্থিতিতে লঞ্চ ও ফেরিতে চলাচল করছেন যাত্রীরা। তবে সময় বেশি লাগায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তারা। দাবি জানিয়েছেন দ্রুত স্পীডবোট চালু করার।
সোমবার কাজিরহাট ঘাট পরিদর্শণে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে বেশ স্রোত। তার মাঝেই আরিচার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে ফেরি ও লঞ্চ। অনেকে ঘাটে এসে স্পীডবোট খুঁজছেন। যারা ফেরি বা লঞ্চে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তেমনি একজন বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া গ্রামের আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় চাকুরী করি। মাসে এক দু’বার বাড়ি আসা-যাওয়ায় স্পীডবোটেই যাতায়াত করি। এর কারণ সময় কম লাগে। আজকে ঘাটে এসে জানতে পারি স্পীডবোট চলাচল বন্ধ আছে। যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে দ্রুত স্পীডবোট চালু করার দাবি জানাই।’
স্পিডবোট না পেয়ে লঞ্চে ঢাকায় যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার প্রয়োজনে প্রায়ই ঢাকায় যেতে হয়। কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে দুরত্ব কম। দ্রুত ঢাকায় যাওয়া আসা যায়। আর স্পীডবোটে দেখা যায় ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে। অথচ ফেরি বা লঞ্চে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। এই দুর্ভোগ লাঘবে স্পীডবোট থাকলে সুবিধা হয়।’
কাজিরহাট ঘাটের স্পীডবোট ব্যবসায়ী ফেরদৌস হোসেন ও আব্দুল বাতেন বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় ১৫ বছর আওয়ামীলীগ নেতারা অবৈধভাবে স্পীডবোট ঘাট পরিচালনা করেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নিয়েছে। এই রুটে যেখানে ২০ থেকে ২৫টি স্পীডবোট চালানো যথেষ্ট। সেখানে তারা ৮০টি স্পীডবোট চালাতো। বড় একটা স্পীডবোটে ১৬ জন ধারণা ক্ষমতা, সেখানে তারা বেশি টাকার আশায় ২১ জন নিতো ঝুঁকিপূর্ন হলেও। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে জনবান্ধব স্পীডবোট চালু করতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিএ’র নগরবাড়ী-কাজিরহাট-নরাদহ নদী বন্দরের পোর্ট অফিসার মোঃ আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘আমরা স্পিডবোট মালিক সমিতির সাথে একাধিকবার কথা বলেছি। তারা আমাদেরকে বারবার আশ্বস্ত করেও স্পিডবোট চালু করতে পারেননি। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা জানতে পেরেছি, স্পিডবোট মালিকদের প্রায় সবাই কোন না কোনভাবে বিগত সরকারের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ফলে, তাদের সবাই এখন আত্মগোপনে চলে গেছেন। এই প্রেক্ষাপটে, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে এই রুটে চলাচলকারি সকল স্পিডবোটের রুট পারমিট বাতিল করে, নতুনভাবে রুট পারমিট আহ্বান করার জন্য প্রস্তাব করেছি। আমরা দ্রুত স্পিডবোট সেবা চালু করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’