রেলব্রিজের ২৭টি স্লিপার আটকাতে ১৯ টুকরা কাঠের বাটাম II বেশির ভাগ নাটবল্টুতে পলিথিনের দড়ি থেরাপি

আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৪, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:কাঠের বাটাম (বাতা) দিয়ে স্লিপার আটকিয়ে চালানো হচ্ছে ট্রেন। পুরো রেলওয়ে ব্রিজের এমন কোনো স্লিপার নেই, যেটিতে বাতা লাগানো হয়নি। পুরো ব্রিজের ২৭টি স্লিপারকে একে অপরের সঙ্গে ধরে আছে ১৯ টুকরা কাঠের বাটাম। এরমধ্যে রেল ব্রিজের উত্তরপাশে ১০টি এবং দক্ষিণপাশে ৯ টি বাটাম ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্রিজে থাকা কাঠের স্লিপারগুলোর কোনো রেল পয়েন্টে ভাঙ্গা, কোনোটির মাঝে থেকে খুলে পড়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে চলাচল করছে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো।

এই রেলওয়ের ব্রিজটি রাজশাহী মহানগরীর বুধপাড়া গণির মোড় এলাকায় অবস্থিত। ব্রিজটির নম্বর ৫৮। পুরো ব্রিজজুড়ে কাঠের ২৭টি স্লিপার (তক্তা) রয়েছে। তবে স্লিপার নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। পুরো ব্রিজের ৭ থেকে ১০টি স্লিপারের নাজুক অবস্থা। একবার ট্রেন গেলেই নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে আরেকটির সঙ্গে লেগে যায়। শুক্রবার (২২ মার্চ) দিনভর ৫৮ নম্বর রেল ব্রিজ পর্যবেক্ষণে বিষয়গুলো লক্ষ্য করা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, ব্রিজটি রেললাইন স্থাপনের সময় তৈরি করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় ব্রিজের কাঠের স্লিপারগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। কোনো কোনো সময় ট্রেন চলাচল করা লাইন (ট্রেক) পরিবর্তন করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় মেরামতের কাজ করা হয়েছে। কখনও রেলওয়ের ব্রিজের গাডার (যার উপরে স্লিপার বসানো এবং স্লিপারের উপরে রেল লাইন বসানো) সংস্কারের কাজ করেছেন কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘ দিনের এই রেলওয়ে ব্রিজটির গাডার নির্দিষ্ট স্থান থেকে সরে যাওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে ব্রিজটি মেরামত করা হয়। ওই সময় গাডারের নিচের অংশে লোহা ঢালাই দেওয়া হয়। এছাড়া গাডার সরে যাওয়া রোধে ব্রিজের পিলারে লোহার রড পুঁতে গাডার নির্দিষ্ট স্থানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এরপরে ব্রিজের গাডার না সরে গেলেও স্লিপারের বেহাল দশায় বাড়াচ্ছে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রিজের কাঠের স্লিপারগুলোর কোনোটির বিভিন্ন অংশে ভেঙে গেছে, কোনোটির খসে পড়েছে। এমন অবস্থায় রেলওয়ের কর্মীরা সপ্তায় দুই থেকে তিনদিন কাজ করেও স্লিপারগুলো ঠিক মত রাখতে পারছেন না। ফলে নির্দিষ্ট জায়গায় স্লিপার রাখতে কাঠের বাতার আশ্রয় নিয়েছেন তারা। ফলে পুরো ব্রিজের স্লিপার কাঠের বাতা দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। পুরো কাজে কয়েকটি কাঠের বাতা ব্যবহার হলেও তা ভেঙ্গে গিয়ে ১৯ টুকরো হয়েছে। আর কাঠের বাতাগুলোতে বিভিন্ন সময়ে এতো পরিমাণের পেরেক লাগানো হয়েছে- তাতে পেরেক লাগানোর জায়গাও নেই বললেই চলে। তবুও স্লিপার আটকানো যাচ্ছে না যথাযথ স্থানে।

লাইনের পশ্চিমপাশ থেকে ব্রিজটিতে উঠতে গিয়ে প্রথমেই চোখে পড়বে ভাঙ্গা কাঠের স্লিপার। সেখানে কাঠ আটকানো লোহার পিন ভাঙ্গা স্লিপারে পুরো ডুবে আছে। রেললাইন ধরা বাদে। তারপর থেকে কাঠের বাটাম লাগানো শুরু হয়েছে। তার তিন নম্বর স্লিপারের করুণ দশা। এই স্লিপারের কাঠ এমনভাবে ভেঙেছে ফুটো দিয়ে নিচের পানি দেখা যাচ্ছে। পুরো স্লিপারের বেশিরভাগ অংশ ভেঙ্গে গেছে। এরপরে আট নম্বর স্লিপারের (রেলের উত্তরপাশে পাশের অংশ) গাডারের সঙ্গে কাঠ আটকানো লোহার নাটবল্টু নেই। রেল ব্রিজের দক্ষিণের ১০ নম্বর স্লিপারের নাহেজল অবস্থা। এটিতে একটি লোহার পিন লাগানো রয়েছে লাইনের সাথে। অপর পাশে কাঠ ভাঙ্গার কারণে ফাঁকা রয়েছে। এমন অবস্থায় বেশ কয়েকটি স্লিপারের।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ব্রিজের উপরে একটি রেল লাইনের সাথে অপরটি জোড়া দেওয়ার যে পয়েন্ট সেটিতে নাটবল্টু লাগানো আছে ঠিকই; কিন্তু সেগুলো বাধা হয়েছে নাইলনের দড়ি দিয়ে। দড়ি বেধে নিশ্চিত করা হয়েছে যাতে নাট থেকে বল্টু খুলে না পড়ে যায়। তবুও রাখা যায় না নাটের সাথে বল্টুকে। তবে রেলওয়ের অন্য কোথায় ব্যবহার হয়েছে এমন বেশ কিছু কাঠ লাগানো হয়েছে এই ব্রিজে। স্লিপারের গায়ে তার চিহ্ন রয়েছে। যা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবেন।

স্থানীয় কয়েকজন জানায়, ব্রিজের উপরে কোনো ট্রেন উঠলে বিকট শব্দ হয়। যদিও এই শব্দ দুই-তিন বছর আগে তেমন হত না। কিন্তু এখন ট্রেন গেলে বিকট শব্দ শোনা যায়। আবার ব্রিজের উপরে ব্যবহার করা স্লিপারগুলো ট্রেন যাওয়ার পরে একটি আরেকটির সাথে লেগে যায়। ফলে এমনিতেও ব্রিজ পার হওয়া কষ্টকর হয়ে যায় সাধারণ মানুষের। দুর্ঘটনা এড়াতে রেলওয়ে ব্রিজটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের ওই এলাকায় কাজ করা কয়েক মিস্ত্রি বলেন, তারা কর্তৃপক্ষকে বার বার জানিয়েছেন ব্রিজটি সংস্কারের জন্য। সপ্তায় দুই থেকে তিন দিন এই ব্রিজে সময় দিতে হয় তাদের। তার পরেও স্লিপারগুলো ঠিক থাকে না। ব্রিজের জন্য ১০টি কাঠের স্লিপারের জন্যও বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উদ্ধর্তন উপসহকারী (পথ) ভবেশ চন্দ রাজবংশী বলেন, সেখানে প্রতিদিনই লোকজন গিয়ে কাজ করছে। কাঠের স্লিপারগুলো সরে যায়। সেগুলো কাঠের বাটাম (বাতা) লাগিয়ে নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা হয়। এই বাটটামে কিন্তু কোনো লোড বহন করে না। তবে স্লিপারগুলো যেন সরে না যায় সেই জন্য ব্যবহার করা হয়।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, সবগুলো ব্রিজ খুঁটে খুঁটে দেখা হচ্ছে। ইদের আগে আমরা সবগুলো ব্রিজ আপডেট করব। আর ৫৮ নম্বর ব্রিজের কী সমস্যা সেটি আমরা ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়ে দেখব। না দেখে বলা যাবে না ব্রিজের কী অবস্থা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ