কানসাটে প্রতিদিন আমের বিক্রি ২০ কোটি টাকা দাম পেয়ে খুশি চাষি ও ব্যবসায়ীরা

আপডেট: জুন ২৫, ২০২৪, ৮:০৮ অপরাহ্ণ

 

কানসাটে প্রতিদিন আমের বিক্রি ২০ কোটি টাকা দাম পেয়ে খুশি চাষি ও ব্যবসায়ীরা

সফিকুল ইসলাম, শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি:


সারা দেশে যা আম উৎপাদন তার বেশির ভাগ হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমের রাজধানীও বলা হয়। এই জেলার শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষক। কৃষি কাজের মধ্যে আম থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম। কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন প্রতিকুলতার মাঝে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে এবার মোড় ঘুরেছে। কানসাট আমের বাজারে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ২০ কোটি টাকার আম। আমের দামেও খুব খুশি চাষিরা।

আমপাড়া ও কেনাবেচা শুরু হয়েছে। জমে উঠেছে শতাধিক বছরের পুরানো এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আমবাজার। এই বাজার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে অবস্থিত। পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু আমের সমাহার। কেউ প্লাস্টিকের ক্যারেটে, কেউ ডালিতে, কেউ সাইকেলে ও ভ্যানে কেউ বা ভটভটিতে করে আম নিয়ে আসছেন বিক্রির জন্য। বাজারও জমে উঠেছে বেশ। প্রায় ১৫ বছরের মধ্যে দামও সবচেয়ে বেশি এ বছর। তবে উৎপাদন কম।

আমের এই বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার আম বোঝাই ভ্যান, ভটভটি, বাইসাইকেল, মিনি ট্রাক রাস্তার পাশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আম বাজারে দাঁড়াবার ঠাঁই নেই। সেখানে আম বিক্রেতা, ক্রেতা, চাষি ও আড়তদারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আমের দর খুবই ভাল।

কুষ্টিয়া থেকে আসা আম ব্যবসায়ী শামসুল হক জানান, বিক্রেতা ল্যাংড়া আমের দাম চেয়েছেন ৪ হাজার ৬০০ টাকা মন। আমি বলেছি তিন হাজার ৮০০ টাকা। তবে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি করবে বলে জাানিয়েছে বিক্রেতা। তিনি আরও জানান গত সপ্তাহে ল্যাংড়া আম ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে কিনেছি।

হাদিনগরের আমচাষী ও ব্যবসায়ী নাজির হোসেন জানান বর্তমানে আমের বাজার ভাল। যা ২০২২ সালের বাজারকে ছাড়িয়ে গেছে। সে বছরও আমের দর ভাল ছিল। বর্তমানে লখনা আম মণপ্রতি ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে, ফজলী দুই হাজার থেকে ২২শ টাকা, ক্ষিরসাপাত পাঁচ হাজার টাকা মণ, আম্রপলি ৩৫শ থেকে চার হাজার টাকা, ব্যানানা আম ৩৫ শ থেকে চার হাজার মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। যা ঈদের আগে থেকে আমের ধরণ ও জাত হিসাবে পাঁচ থেকে ১৫ শ টাকা মণ প্রতি বেশী দাম পাওয়া যাচেছ।

অন্যদিকে আম ব্যবসায়ী রুবেল হক জানান, এ বছর আমের জন্য অফ ইয়ার হওয়ায় শিবঞ্জের আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীর চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কারণ যাদের গাছে আম ধরেনি তারা এ বছরে ভালো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যাদের গাছে আম ধরেছে তারা দাম ভাল পেয়েছে।

কানসাট আম আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ টিপু জানান আমরা এ মাসের প্রথম দিকে কানসাট, রহনপুর, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জের আমচাষি, আম ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের সাথে সভা করে ৪৮ কেজিতে মণ দরে আম ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু তারপরও ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম কেনাবেচা হচ্ছে। এর জন্য কিছুটা দায়ী নতুন করে কেউ কেউ আম উদ্যোক্তা সেজে আমের ওজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তকে বানচাল করছে।

তিনি আরও বলেন, এবছরে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হচ্ছে। যা আগামী সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে। গড়ে এ বছরে শুধু কানসাটে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে এবং জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার উপপরিচালক পলাশ সরকার, জানান গত এবছর জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ মেট্রিক টন। যা গত বছর ছিল চার লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। আম বাগানের পরিমাণ হলো ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর ।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, অফ ইয়ার, অতিরিক্ত খরা, দীর্ঘকালীন শীত থাকা,অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি হওয়া প্রভুতি কারণে আমের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ফলে এ বছর আমের উৎপাদন কম হয়েছে।