কিডনি চুরির অভিযোগ ভিত্তিহীন : বিএমএ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭, ১২:১১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



নাটোরের জনসেবা হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় ডা. এমএ হান্নানের বিরুদ্ধে রোগির কিডনি ‘চুরির’ যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতৃবৃন্দ। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বিএমএ নেতৃবৃন্দ এই দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বিএমএ’র রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক ডা. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকার পিজি হাসপাতাল ছাড়া দেশের আর অন্য কোথাও রোগির কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। কিডনি বের করে নিলে অন্য কোথাও তা সংরক্ষণও করা যাবে না। তাই ডা. এমএ হান্নানের বিরুদ্ধে রোগির কিডনি বের করে নেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, ইচ্ছে করলেই রোগির কিডনি বের করে অন্য কারও শরীরে প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। এর জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ) সুবিধাসহ দক্ষ নার্স ও মেডিকেল সুযোগ-সুবিধা লাগে। এসবের কিছুই নাটোরের ওই বেসরকারি হাসপাতালটিতে নেই। আর কোনো একজন চিকিৎসকের পক্ষে রোগির কিডনি অপসারণ সম্ভবও নয়।
ডা. খলিলুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ওঠায় ওই রোগির কিডনি আছে কী না তা পরীক্ষা-নীরিক্ষার দায় দেয়া হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সেই পরীক্ষার প্রতিবেদনের পর নিশ্চিত হওয়া যেত, ওই রোগির কিডনি আছে কী না। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতো। কিন্তু পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে রোগিকে আনার জন্য তার বাড়িতে গাড়ি পাঠানো হলেও তিনি আসেন নি। রহস্যজনককারণে তিনি পরীক্ষা এড়িয়ে আদালতে মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। তিন দিনের মধ্যে পুলিশকে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য এই কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রোগি পরীক্ষা না করায় তদন্ত কমিটি কোনো প্রতিবেদন দিতে পারেনি। এর দায় ওই রোগির।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএমএ’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. তবিবুর রহমান শেখ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মহিবুল হাসান, বিএমএ’র রাজশাহীর সভাপতি ডা. এসআর তরফদার, রামেকের অধ্যক্ষ ডা. আনোয়ার হাবিব, উপাধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বেলা ১১টার দিকে রামেক প্রধান ফটকের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন। এ কর্মসূচিতে রামেকের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপি ওই মানববন্ধনে বিএমএ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। এ সময় তারা ডা. এমএ হান্নানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, ডান দিকের কিডনি ও মূত্রনালিতে পাথরের কারণে ২০১৫ সালের ১২ জুন নাটোর সদরের জনসেবা হাসপাতালে জেলার সিংড়া উপজেলার ছোটচৌগ্রামের ফজলু বিশ্বাসের স্ত্রী আসমা বেগমের (৫০) অস্ত্রোপচার করা হয়। এর ৬ দিন পর তাকে ওই হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয়।
সম্প্রতি শরীরিক সমস্যার কারণে আসমা বেগম তার পেটের আল্ট্রাসনো করেন। এতে তার ডান দিকের কিডনি দৃশ্যমান হয়নি। এ কারণে তার স্বজনরা গত ৩ ফেব্রুয়ারি জনসেবা হাসপাতালে গিয়ে অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক এমএ হান্নানকে গালিগালাজ করেন। আসমার স্বজনদের দাবি, ২০১৫ সালে কিডনির পাথর অপসারণের সময় তার কিডনি বের করে নেয়া হয়েছে।
এ ধরনের অভিযোগের পর নাটোর সদর থানা পুলিশ ওই দিন ডা. এমএ হান্নানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে বিএমএ নেতৃবৃন্দ ও সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ডা. এমএ হান্নানসহ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে কিডনি চুরির মামলা করেন আসমা। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এসব সংবাদের ব্যাখা দিতে ও ডা. এমএ হান্নানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে বিএমএ’র পক্ষ থেকে রাজশাহীতে এই মানববন্ধন এবং সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ডা. এমএ হান্নান রামেকের সার্জন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। এ ছাড়া তিনি বিএমএ’র কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর।