বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
রাজধানী ঢাকার উত্তরায় স্কুল পড়ুয়া এক কিশোর আদনান কবীরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর কিশোরদের গ্যাং সম্পর্কিত ভয়ঙ্কর সব তথ্য জাতির সামনে এসেছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক ও উৎকণ্ঠার যে, দেশের শিশুরা হত্যা ও খুনের সাথে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। এটা শুধু ব্যক্তিগতভাবে কোনো নৃশংসতা নয়- গ্যাং সিন্ডিকেট করেই তারা অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। অপরাধে যুক্ত কিশোররা শুধু দরিদ্র পরিবারের নয়Ñ স্বচ্ছল পরিবারের কিশোররাও অপরাধ জগতের সাথে নিজেদের জড়িয়ে পড়ছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী আদনান হত্যার সাথে যে আট কিশোরকে র্যাব গ্রেফতার করেছে তারা উত্তরার ডিসকো বয়েজ এবং বিগ বস কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। এর মধ্য গ্যাঙের দলনেতাও রয়েছে। বুধবার সাংবাদিকদের সামনে গ্রেফতার কিশোরদের হাজির করা হয়। মুখে সবে দাড়ি-গোঁফ গজিয়েছে তাদের। পাওয়ার বয়েজ, ডার্ক শ্যাডো, নাইন স্টার এমন আরো অনেক স্টাইলিশ নাম নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। এমন ফিল্মি সব নাম হলেও এদের কার্যক্রম অতটা সরল নয়। এর সদস্য কিশোরেরা আরো অনেক কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলে র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন।
এরা মাদকের সাথে কিছুটা জড়িত। আবার পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন যায়গায় লম্বা সময় ধরে বসে থেকে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। এদের সাথে চলতে চলতে ভালো ছেলেরাও অপরাধে ঝুঁকে পড়ে।
এসব গ্যাঙের সদস্য আছে বিভিন্ন রকমের। তবে প্রায়ই দেখা যায় স্কুল ড্রপ-আউট ছেলেরা যারা কিছু করে না তারা স্থানীয় অন্য ছেলেদের গ্রুপে আসার জন্য বাধ্য করে। মনের মিল হলে অন্যরাও আসে। পুলিশের ভাষ্য।
৬ জানুয়ারি কিশোর আদনান কবীরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর কিশোরদের এমন কর্মকা- নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় ওঠে। অভিভাবক মাত্রই উদ্বিগ্ন নিজ নিজ সন্তানদের নিয়ে।
কিশোরদের এই ব্যাপক মাত্রায় অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে সমাজবিদ ও মনোবিদরা ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু সমাজের বাস্তব অবস্থা থেকে এর কারণ মোটা দাগে উপলব্ধি করা কঠিন কিছু নয়। সমাজে বিদ্যমান অসম প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও লাগামহীন দুর্নীতির আগ্রাসনে সমাজের মূল্যবোধের জায়গায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। মানুষে মানুষে যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতত্ববোধ তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। টাকার পিছনের উর্ধশ্বাস দৌড়াতে গিয়ে একদিকে নৈতিক স্খলন হচ্ছে অন্যদিকে ব্যক্তি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে শিশুরা। পরিবারের সদস্যদের সাথে অভিভাবকরা প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারছে না। সন্তানরাও বিভ্রান্ত- বিচ্ছিন্নতা নিয়ে বেড়ে উঠছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সে আপন করে ভাবতে পারছে না। ফলে তার মধ্যে সমাজ ও পরিবার নিয়ে কোনো দায়বোধও সৃষ্টি হচ্ছে না। সন্ত্রাস- জঙ্গিবাদ ও অপরাধ প্রবণতা ও স্বার্থপরতায় শিশু ও তরুণ দ্রুত আকৃষ্ট হচ্ছে। এমনি এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি জাতি অতিক্রান্ত করছে।
এ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। পরিবার থেকে দায়বদ্ধতা অস্বীকৃতি হতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে আমাদেরকে বড় মাশুল দিতে হতে পারে। পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। পরিবার থেকেই শিশু পরিবারের সদস্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের সম্পর্ক সৃষ্টির পাঠ লাভ করে। মানবিক মূল্যবোধের শুরুটা এখান থেকেইÑ যা আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যে ছিল, এখন পরাহত হয়েছে। আমাদের আবারো ঐতিহ্যের শেকড় সন্ধানে ব্যাপৃত হতে হবে।