‘কুকুরের দাম আছে, আমাদের ছিল না’ || ৫৩ মাদক ব্যবসায়ীর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয়

আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০১৭, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়ে নগরীর চামারপাড়া মহল্লার হোসনে আরা বেগম (৪০) বলেছেন, ‘কুকুরের দাম আছে, কিন্তু এতোদিন আমাদের কোনো দাম ছিল না। তাই মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিলাম। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায় না মাদক ব্যবসা করলে। আত্মীয়স্বজন কেউ বাসায় আসে না। সবাই ঘৃণা করে। আমি মাদক ব্যবসা ছেড়েছি! গর্বে আমার বুক ভরে উঠছে।’
মাদক ব্যবসা পরিত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ও তাদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত কমিউনিটি পুলিশিঙের এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন হোসনে আরা বেগম। ‘মাদকের ড্যান্ডি’ খ্যাত নগরীর উপকণ্ঠ গুড়িপাড়ার ৫৩ জন মাদক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা পরিত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন। হোসনে আরা বেগমের মতো  তারা আর কখনও মাদক ব্যবসা না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরীর গুড়িপাড়া এলাকার গুলজারবাগ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অন্ধকার জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় সেখানে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম ফুল উপহার দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীদের আলোর ভুবনে বরণ করে নেন।
মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারী ৫৩ জন নারী-পুরুষের মধ্যে প্রায় সবার নামে এক বা একাধিক মাদকের মামলা আছে। তবে আগামিতে তারা আর কখনও মাদক ব্যবসা করবেন না বলে জানিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরোয়ানা না থাকায় পুলিশ এ সময় কাউকেই গ্রেফতার করেনি। বরং মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারী ১৫ জন দরিদ্র নারী-পুরুষকে ভ্যান ও নগদ অর্থ দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
এর আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আরএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সবার পুনর্বাসনের প্রয়োজন নেই। যারা নিতান্তই গরীব, তাদের পুনর্বাসন করা হলো। বাকিরা আজ থেকে অন্য পেশায় মন দেবেন। কেউ মাদক ব্যবসা করবেন না। মাদক একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় কে কে মাদক ব্যবসা করেন, তার নাম আমাদের কাছে আছে। কে কে পরিত্যাগ করলেন তাও আমরা দেখলাম। বাকিদের ধরা হবে। পুলিশ সুযোগের অপেক্ষায় আছে। এখনও সময় আছে, মাদক ব্যবসা ছেড়ে ভালো হয়ে যান। আজ যারা মাদক ব্যবসা ছাড়লেন এবং যার যার নামে মামলা আছে তাদের কথা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলীকে জানানো হবে। আদালত তাদের কথা বিবেচনাও করতে পারেন।’
মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের সামনে আজ মাদক ছাড়ার ঘোষণা দিলেন। এতো মানুষ দেখলো। প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরাও দেখলেন। পরে যদি শুনি আবার পুরনো কারবারে ফিরেছেন, তাহলে আপনাদের জন্য কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে। তখন ধরলে ৫-৭ বছরের আগে ছাড়া পাবেন না।’
স্থানীয়দের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা মাদক ব্যবসা ছাড়লেন, তারা অবশ্যই ভালো কাজ করলেন। তাদের মাথা এখন থেকে উঁচু থাকবে। আপনারা তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবেন। কেউ ঘৃণা করবেন না। আর আজকের পর যদি এদের মধ্যে থেকে কেউ মাদক ব্যবসায় আবার জড়ান, আমাদের জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, আরএমপির উপকমিশনার (পশ্চিম) একেএম নাহিদুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবা বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামসুদ্দিন, আরএমপির উপকমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরী, রাজপাড়া থানা কমিউনিটি পুলিশিঙের সভাপতি আজিজুল আলম বেন্টু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমূখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন, নগরীর মতিহার জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আবদুর রশিদ, নগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম, মতিহার জোনের সহকারী কমিশনার সুশান্ত চন্দ্র রায়, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবুসহ নগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ