কুমিল্লায় আজও ঘৃণিত মোশতাক-রশিদ

আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০১৭, ১:১৮ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন। নির্মম এ হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম ছিলেন কুমিল্লার খন্দকার মোশতাক। অপরদিকে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া নায়কদের অন্যতম ছিলেন তারই ঘনিষ্ঠ সহচর মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ও বিদেশে পলাতক কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ।
খন্দকার মোশতাকের বাড়ি জেলার দাউদকান্দি উপজেলার দশপাড়ায় এবং কর্নেল রশিদের বাড়ি চান্দিনা উপজেলার ছয়গড়িয়া গ্রামে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করার আগে মরে গিয়ে খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দায় থেকে রেহাই পেলেও ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে বর্তমানে বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ফ্রিডম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল রশিদ।
১৫ আগস্ট এলেই আলোচনায় উঠে আসে কুমিল্লার গণমানুষের কাছে নিন্দিত ওই দুইজনের নাম। রশিদকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে মামলার রায় কার্যকর করার দাবি এখন কুমিল্লার সচেতন রাজনৈতিক মহলের। আত্মস্বীকৃত খুনি হয়েও কর্নেল রশিদ ১৯৯৬ সালে চান্দিনায় কেন্দ্র দখল করে ৫৭ হাজারের অধিক ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিল। ওই খুনির পরিবার এখন অনেকটা অসহায়-নিঃস্ব। চান্দিনায় থাকা তার সকল স্থাবর -অস্থাবর সম্পত্তি এখন সরকার বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে। এলাকার লোকজনও তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে এ নির্মম হত্যার ঘটনায় তার বিচার দাবি করছে।
কর্নেল রশিদের গ্রামের বাড়ি চান্দিনার ছয়গড়িয়ায়। বর্তমানে নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে ওই পরিবারের গোপনে কিছু যোগাযোগ থাকলেও এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। লিবিয়ায় গাদ্দাফী সরকারের পতনের পর সে পাকিস্তানে রয়েছে বলে প্রচারণা রয়েছে। এ নিয়ে সরকারিভাবে এক বছর পূর্বে পাকিস্তান সরকারের নিকট বাংলাদেশ থেকে চিঠি দেয়া হলেও এখনো চিঠির জবাব আসেনি।
পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের আগে ও পরে খুনিরা খন্দকার মোশতাকের দশপাড়ার বাড়ি ও রশিদের চান্দিনাস্থ ছয়গড়িয়ার বাড়ি ছাড়াও কুমিল্লা বার্ডে এবং কুমিল্লা নগরীর অশোকতলার একটি বাসায় একাধিকবার গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। তাই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসির রায় কার্যকরের পর থেকে এখনও কুমিল্লার মোশতাক ও রশিদের নাম যেমনটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, তেমনি খুনিদের গোপন বৈঠকের সেই বাড়ি দুটি নিয়েও জনগণের আগ্রহের কমতি নেই।
তবে এত ক্ষোভ আর কলঙ্কের মাঝেও কুমিল্লাবাসীর অহংকার যে দায়মুক্তির বিল ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন কুমিল্লার সন্তান তৎকালীন আইনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক আপিল বিভাগের বিচারপতি তফাজ্জাল হোসাইন বৃহত্তর দাউদকান্দি (বর্তমানে তিতাস) এলাকারই সন্তান।
দাউদকান্দি ও চান্দিনায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ইতিহাসের নির্মম ওই হত্যাযজ্ঞ এবং এর খলনায়কদের নিয়ে তাদের মাঝে এখনও রয়েছে অন্তহীন ক্ষোভ ও ঘৃণা।
এদিকে বিদেশে পলাতক ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঘাতক কর্নেল রশিদ প্রসঙ্গে কুমিল্লার প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান জানান, মোশতাক-রশিদদের কারণে কুমিল্লাকে ইতিহাসের পাতায় কলঙ্কিত করা হয়েছে। তাই ঘাতক রশিদকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পারলেই হয়তো আমরা দায়মুক্তি পাবো।
কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক জানান, জাতির জনকের ঘাতক খন্দকার রশিদকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছ। ঘাতক রশিদকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে না পারলে ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে কুমিল্লার নাম থেকেই যাবে।
তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ