কুষ্টিায়ার গ্রামে আহমদিয়া পরিবার একঘরে || জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭, ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ

২১ ফেব্রুয়ারি তারা ঢাকঢোল পিটিয়ে বয়কটের ঘোষণা দিলো। বললো ওদের কাছ থেকে কিছু বিক্রি করা যাবেনা, ওদের কাছ থেকে কিছু কেনা যাবে না। ওদের ফসলে পানি দিবেন না।”
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মহেষাখোলা গ্রামে সংখ্যালঘু আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ১১টি পরিবারকে সামাজিকভাবে পুরোপুরি এক ঘরে করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। আহমদিয়া মুসলিম বিরোধীরা ওই ১১টি পরিবারকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। যারা ঘোষণা দিয়েছেন, তারাও বিষয়টি নিয়ে খুব রাখঢাক করছে- তেমনটি মনে হয় না। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য থেকে তা-ই জানা যায়।
ভুক্তভোগিদের জন্য পানি বন্ধ, দোকান বন্ধ, ঢাকঢোল পিটিয়ে বলছে এ গ্রামে ওদের কাছে কিছু বিক্রি করা যাবে না, খেতে-খামারে পানি দেয়া যাবে না। তারা এখন রাস্তায় চলতে, চিকিৎসা নিতে কিংবা যানবাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। ১১ পরিবারের সদস্যরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছে।
আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম ঘটনা নয়Ñ বিংশ শতাব্দির আশি ও নব্বুয়ের দশকে সারা দেশে অনেক সহিংস ঘটনা ঘটেছে আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। রাজশাহীতেও আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মসজিদ ভাংচুর ও খুনের মত ঘটনাও আছে। আর এই কাজটি করে থাকে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিগুলো। তারা নানা ভাবে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়িয়ে দেয়। এরা প্রকাশ্যে কিংবা নেপথ্যে থেকে সমাজকে অস্থিতিশীল করে তোলে। কুষ্টিয়ার গ্রামের ওই বয়কটের সাথে সাম্প্রদায়িক শক্তির যোগসাজস থাকাটাই স্বাভাবিক।
স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ তার মতে এ বিষয়টি সামাজিক সমস্যা তাই এর আইনগত সমাধানের সুযোগ কম।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন দায়িত্বশীল কমকর্তা যা বলেছেন তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তিনি নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টাই করেছেন। অবশ্যই আহমদিয়া মুসলিমদের সমস্যাটি সামজিক কিন্তু ঘটনার যে ফলাফল তা মানবাধিকারের সাথে সম্পর্কিত। ১১ টি পরিবারের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এবং তারা আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকারী। শুধু তা-ই নয়Ñ আহমদিয়া মুসলিম পরিবারগুলোকে বয়কটের নেপথ্যে যারা আছে তারা আইনকে নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেÑ এটা কি অপরাধ না?
কুষ্টিয়ার ওই গ্রামের ঘটনাটি যে সাম্প্রদায়িক উস্কানিসঞ্জাত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কালক্ষেপণ না করে এর সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অতিত অভিজ্ঞতা বলে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সামান্য ছাড় দিলেই তারা বড় ধরনের বিপদ ঘটিয়ে দিতে পারে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ