কুয়েটের রেডিও, কুয়েটিয়ানদের রেডিও

আপডেট: ডিসেম্বর ২২, ২০১৬, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

স্বপ্নীল মাহফুজ



২০১৬ সালের শেষের দিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বি.এম.ই’১৪ ব্যাচের জয় জেমস কস্তার সঙ্গে এক বিকেলে হাঁটছিলেন ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তুষার। তখন জয় বলল, ‘দাদা, অন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (বুয়েট, চুয়েট) তো রেডিও চালু করে ফেলল, আমরা শুধু বসে আছি। চলেন না আমরাও চালু করি।’
এ কথা শোনার পর তুষার কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন জয় এর দিকে। তখন যেন একটু সাহস পাওয়া। তুষার জয়কে বললেন আগে একবার ভেবেছিলেন এবং বড় ভাইদের বলেছিলেন। কিন্তু কেউ তেমন আগ্রহ না দেখানোয়, আর টেকনিক্যাল বিষয় জানা থাকায় রেডিওর চিন্তা বাদ দিয়েছিলেন।
এবার তুষার আর জয় দুজনে মিলে কাজে নেমে পড়ল। কাজ বলতে ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে কিভাবে টেলিকাস্ট করা যায়। জয় প্রথম সফলভাবে টেলিকাস্ট করল। বলা যায় সেখান থেকেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার সূত্রপাত। তখন তারা ভাবলেন অফিসিয়ালি অনুমতি নেয়া যাক। দুজনে মিলে গেলেন তৎকালীন কুয়েট ছাত্র কল্যাণ এর সহকারী পরিচালক ওসমান গনী নাঈম স্যার এর কাছে। স্যারকে বুঝিয়ে বললেন কুয়েট রেডিওর কথা। ওসমান গনী নাঈম স্যার খুব অনুপ্রাণিত করলেন। বললেন লিখিত একটা আবেদন করে ফেল কুয়েট ছাত্র কল্যাণ এর পরিচালক বরাবর। তুষার আর জয় দুজনে মিলে ঠিক করলেন কে কে আরজে হবেন। কথা বলা হয় তাদের সঙ্গে। শুরু হল ওয়েবসাইট তৈরির কাজ।
তুষার এবং ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং’১২ ব্যাচের সাইদুর রহমান মিলে ওয়েবসাইট তৈরির কাজ করতে থাকলেন। লিখিত আবেদন নিয়ে দেখা করলেন কুয়েট ছাত্র কল্যাণ এর পরিচালক সোবহান স্যার এর কাছে। সোবহান স্যার বললেন ‘কাজ দেখাও। ওয়েবসাইট কই?’ তখনো ওয়েবসাইটের কাজ সম্পন্ন হয় নি। তাই অনুমতি ও মিলল না। তখন টাকা জোগাড় করে ডোমেইন কেনা হল। ওয়েবসাইট আপলোড করা হল। আবার সোবহান স্যার এর কাছে গেলেন। ওয়েবসাইট দেখালেন। সোবহান স্যার টেস্ট ট্রান্সমিশন এর অনুমতি দেন। এরই মধ্যে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত করা হল পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুজিত কুমার শীল স্যার, আলমগীর হোসেন স্যার এবং ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেকচারার মেহেদী হাসান শুভ্র স্যারদের।
২১ অক্টোবর ২০১৬, রাত ১০ টা ০১ মিনিটে যাত্রা আরম্ভ করল কুয়েট রেডিও। প্রথম আরজে হিসেবে বসলেন জয় জেমস কস্তা।
কুয়েট রেডিওতে আরজে হিসেবে অথবা টেকনিক্যাল বিষয় সামলানোর জন্য বর্তমানে যুক্ত আছেন মোট নয় জন। তারা হলেন, তুষার (ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড কমুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং’১৩), জয় (বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং’১৪), গৌরব (বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ’১৪), সাঈদুর (ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড কমুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং’১২), স্টিলেরিয়া (বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ’১৪), শিহাব (বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং’১৪), মুইজ (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’১৫), ফাহিম শাহরিয়ার (তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল’১৫), অন্বেষা (মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং’১৪)। তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের ছাত্র ফাহিম শাহরিয়ার কুয়েট রেডিওর অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার।

কুয়েট রেডিওর উদ্দেশ্য হল কুয়েট এর বিভিন্ন সময়ের সাফল্য এবং প্রতিভাগুলো তুলে ধরা। এছাড়া কুয়েট এর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রচার করে কুয়েট রেডিও। এখন পর্যন্ত রেডিওর যাবতীয় ব্যয় এর সদস্যরাই বহন করছে। কুয়েট রেডিও অনুষ্ঠান প্রচার করে সপ্তাহে শুক্র এবং শনিবার। শুক্রবার রাত ৮.০০ থেকে ১০.০০ পর্যন্ত থাকে আরজে গৌরব এবং আরজে শিহাব তাদের ‘গ্যাঞ্জাম’ অনুষ্ঠান নিয়ে। পরবর্তীতে আরজে জয় জেমস কস্তা থাকেন রাত ১০.০০ থেকে ১২.০০ পর্যন্ত ‘নাম নেই’ অনুষ্ঠান নিয়ে। শনিবার আরজে স্টিলেরিয়া এবং আরজে অন্বেষা থাকেন সন্ধ্যা ৬.০০ থেকে রাত ৮.০০ পর্যন্ত। রাত ৮.০০ থেকে রাত ১০.০০ পর্যন্ত ‘ক্যাম্পাসে আমরা’ নিয়ে আসেন আরজে মুইজ। এবং রাত ১০.০০ থেকে রাত ১২.০০ পর্যন্ত ‘মায়া ফানুস’ নিয়ে থাকেন আরজে তুষার।
কুয়েট রেডিও, কুয়েটের রেডিও, কুয়েটিয়ানদের রেডিও- এই স্লোগানে এগিয়ে চলছে কুয়েট রেডিও। যখন কুয়েট এ ছুটি থাকে অথবা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকে তখন কার্যক্রম বন্ধ রাখে কুয়েট রেডিও। ওয়েবসাইট: িি.িশঁবঃৎধফরড়.পড়স। ফেসবুক পেজ : িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/শঁবঃৎধফরড়। লেখক : শিক্ষার্থী, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কুয়েট।