শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
তানোরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে ব্যাংকের তানোর শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। রাকাবের মহাব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা তদন্ত করতে গতকাল বুধবার তানোরে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। গত ১৯ মার্চ সোনার দেশ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এ তদন্ত শুরু হয়। সংবাদে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে ৮ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে।
তদন্তে বলা হয়, বিক্রিত জমি বন্ধক দিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজস করে ৮ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে ভারতে পালিয়ে যায় কমলা রানী নামের এক সংখ্যালঘু পরিবার। সে ঋণ নিয়ে পালিয়ে গেলে তার জমি ক্রয় করে চরম বিপাকে পড়ে কল্পনা রাণী নামের আরেক সংখ্যালঘু পরিবার। এরা দুজন সম্পর্কে বোন। এ বিষয়ে চলতি মাসের ১৯ মার্চ সোনার দেশ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। ফলে গতকাল ওই বিষয়ে তদন্তের পর অবশেষে প্রমানিত হলো ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তানোর পৌর সদরের গোল্লাপাড়া হালদারপাড়া গ্রামের কমলা রাণী হালদারের নিকট হতে ১৪৪ নং তানোর মৌজায় ১৯৯৬ সালে পৌনে ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন রংপুর পীরগঞ্জের রায়পাড়া গ্রামের অঘোর চন্দ্র সরকারের স্ত্রী কল্পনা রাণী সরকার। কমলা ও কল্পনা দুই বোন। তানোরেই তাদের বাড়ি। ২০০৪ সালের ৬ জুন পৌনে ২০ শতাংশ জমি হতে সোয়া ৫ শতাংশ জমি ধানতৈড় গ্রামের সোয়েব আলী কাছে বিক্রয় করেন। বাকী সাড়ে ১৪ শতাংশ কল্পনা রানীর জমির কাগজ দেখিয়ে কমলা রানী ৮ লাখ টাকার ভুয়া সিসি ঋণ গ্রহণ করে। কিন্তু ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ সঠিকভাবে জমি তল্লাশি না করেই কমলা রানীকে ঋণ প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জমি ক্রয়ের পর কল্পনা রানী জমি খারিজ না করায় ২০১৩ সালে জমি বিক্রি করেও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক ম্যানেজারের যোগসাজসে ওই জমি বন্ধক রেখে ৮ লাখ টাকা সিসি ঋণ নেয় কমলা রাণী। তিনি কমল চন্দ্র হালদারের স্ত্রী। তাদের ছেলে প্রল্লাদের একসময় গোল্লাপাড়া বাজারে অডিও ভিডিও ও টিভি শো-রুমের দোকান ছিল। তিনিও বিভিন্ন এনজিও ও লোকজনের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ধার ঋণ নিয়ে ভারতে পলায়ন করেছেন।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের তানোর শাখার তৎকালীন কর্মরত ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০১৩ সালে কমলা রাণী ঋণ নেয়ার কয়েক মাস পর রাতের আঁধারে পালিয়ে ভারতে চলে যান। দীর্ঘদিন ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বন্ধক রাখা জমি নিলামের জন্য নোটিশ জারি করেন। আমি নিয়মমাফিক কাগজপত্র যাচাইবাছাই করেই ঋণ দিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর কমলা রাণীর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
কল্পনা রাণী জানায়, জমি ক্রয়ের পর খারিজ করা হয় নি। তখন জমি খারিজ করা হলে এ জালিয়াতি ধরা পড়ে যেত। ভূমি অফিস সাফ জানিয়ে দেয়, ব্যাংকের বন্ধকি জমি খারিজ করা যাবে না। ওই জমির মধ্য থেকে সোয়া ৫ শতাংশ জমি ২০০৪ সালে অন্যত্র বিক্রি করেছি।
তিনি আরো জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কৃষি ব্যাংক অডিট করলে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয় কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। যার ফলে রাজশাহী তানোর থানা সহকারী জজ আদালতে মামলা করি। যার মামলা নং ১৫৮/১৪।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোজ্জাম্মেল হক জানান, ব্যাংক ঋণ দেয়াটা ব্যবস্থাপকের অবহেলার কারণেই ঘটেছে। তার উচিত ছিল ঋণ দেয়ার পূর্বে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দশ বছরের হোল্ডিংয়ের খোঁজখবর নেয়া, যে জমি কারো কাছে বিক্রি করেছে কি না, কিংবা খাজনা দেয়া হয়েছে কি না। তদন্ত চলছে। পরবর্তীতে সব বিস্তারিত জানা যাবে।